কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রভাব ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। একদিকে ডেঙ্গু, অন্যদিকে ম্যালেরিয়া-দুটি প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগই যেন চেপে ধরেছে জেলার মানুষকে। একসঙ্গে এই দুই রোগের প্রকোপে উদ্বেগ বাড়ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের মধ্যেই কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৯ জন বাংলাদেশি এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। এরইমধ্যে ৫ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন এ রোগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে এসেছেন। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়িসহ পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় কাজ করতে গিয়ে তারা জীবাণুবাহী মশার শিকার হন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা.

শান্তনু ঘোষ বলেন, 'বর্ষার এই সময় পাহাড়ি এলাকার অ্যানোফিলিস মশা সমতলে চলে আসে, ফলে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। তাই কক্সবাজারে সংক্রমণ বাড়ছে এবং আরও বাড়তে পারে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যালেরিয়ার ওষুধ মজুত আছে। আক্রান্ত প্রত্যেককে আমরা আন্তরিক সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে চাই। তবে মানুষের সচেতনতা এই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্র বড় ভূমিকা রাখতে পারে।'

তথ্য বলছে, জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিও কম উদ্বেগজনক নয়। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ১২০ জন এবং বাকি ২০০৪ জনই রোহিঙ্গা। কেবল ২৯ মে থেকে এ পর্যন্ত ১৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৪ জন।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘রোগী শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা বাসায় গিয়ে পরীক্ষা করি। রেজাল্ট পজিটিভ হলে ওষুধ দেই, অনেকেই ভালোও হয়ে যায়। কিন্তু রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বাইরে গিয়ে কাজ করে আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসার পর দেরিতে চিকিৎসা নেয়, তখন অনেক সময় তা মরণঘাতী হয়ে ওঠে।’

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ম্যালেরিয়ায় ৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১ জন মারা যান। অপরদিকে, গত বছর (২০২৪ সালে) কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২১ হাজার ৪৫৪ জন এবং মারা যান ৭ জন।

কক্সবাজারে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড়, আর ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকা—এই বাস্তবতায় মশাবাহিত রোগ যেন দ্বিগুণ হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ মুহূর্তে জনসচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ। নতুবা এই দুই রোগে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা