শিশুদের ওপর মারাত্মক সহিংসতার জন্য আবারও জাতিসংঘের কালোতালিকায় ইসরায়েল
Published: 20th, June 2025 GMT
জাতিসংঘ দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরায়েলকে ‘কালোতালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিশ্ব সংস্থার এই তালিকায় এমন দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা সশস্ত্র সংঘর্ষে শিশুদের ওপর গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে। এমন এক সময় ইসরায়েলকে কালো তালিকাভুক্তির ঘোষণা এসেছে, যখন গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলেছে, ২০২৪ সালে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের ওপর সহিংসতা ‘নজিরবিহীন মাত্রায়’ পৌঁছেছে। আর শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে। ইসরায়েলি বাহিনীই এসব ঘটনার জন্য দায়ী।
‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বব্যাপী শিশুদের ওপর গুরুতর সহিংসতা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিরুদ্ধে ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতার তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা ও অঙ্গহানি, যৌন সহিংসতা, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলার ঘটনা।
এসব ঘটনার মধ্যে শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে ২ হাজার ৯৫৯ শিশুর ওপর ৮ হাজার ৫৫৪টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৯৪৪টি ফিলিস্তিনি শিশু ও ১৫টি ইসরায়েলি শিশু।
জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে, গাজায় ১ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত ও ৯৪১ শিশু আহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এই সহিংসতা শুরু হয়েছিল। ওই দিন থেকে ইসরায়েল গাজায় টানা নৃশংস ও নির্বিচার বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতিসংঘ বলেছে, ইসরায়েলের অধিকৃত এলাকায় ২০২৪ সালে নিহত আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশুর তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
জাতিসংঘ বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হওয়ার তথ্যও তারা পেয়েছে। সেখানে শিশুদের ওপর সহিংসতার মোট ৩ মোট ৬৮৮টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে লেবাননে ইসরায়েলের চালানো হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে গত বছর পাঁচ শতাধিক শিশু নিহত বা আহত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে শিশুদের ওপর এত মাত্রায় গুরুতর সহিংসতার ঘটনায় আমি মর্মাহত।’ তিনি বলেন, জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার ভয়াবহ ছিল।
গুতেরেস আবারও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যেখানে শিশুদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ নিয়ম রয়েছে, স্কুল ও হাসপাতাল রক্ষার কথা বলা হয়েছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। যেকোনো সামরিক হামলায় সাধারণ জনগণের ক্ষতি এড়াতে হবে।
ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশন এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডসকেও দ্বিতীয়বারের মতো এই কালোতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গাজা ছাড়াও ২০২৪ সালে যেসব দেশে শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো হচ্ছে—কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (প্রায় ৪ হাজার), সোমালিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), নাইজেরিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), হাইতি (প্রায় ২ হাজার ২০০)।
শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা বেড়েছে—লেবাননে (৫৪৫ শতাংশ), মোজাম্বিকে (৫২৫ শতাংশ), হাইতিতে (৪৯০ শতাংশ), ইথিওপিয়ায় (২৩৫ শতাংশ) ও ইউক্রেনে (১০৫ শতাংশ)।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ দ র ওপর ইসর য় ল র ভ ক ত কর র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু
কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রভাব ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। একদিকে ডেঙ্গু, অন্যদিকে ম্যালেরিয়া-দুটি প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগই যেন চেপে ধরেছে জেলার মানুষকে। একসঙ্গে এই দুই রোগের প্রকোপে উদ্বেগ বাড়ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদেরও।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের মধ্যেই কক্সবাজারে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৯ জন বাংলাদেশি এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। এরইমধ্যে ৫ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন এ রোগে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের বেশিরভাগই পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে এসেছেন। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়িসহ পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকায় কাজ করতে গিয়ে তারা জীবাণুবাহী মশার শিকার হন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শান্তনু ঘোষ বলেন, 'বর্ষার এই সময় পাহাড়ি এলাকার অ্যানোফিলিস মশা সমতলে চলে আসে, ফলে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। তাই কক্সবাজারে সংক্রমণ বাড়ছে এবং আরও বাড়তে পারে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যালেরিয়ার ওষুধ মজুত আছে। আক্রান্ত প্রত্যেককে আমরা আন্তরিক সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে চাই। তবে মানুষের সচেতনতা এই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্র বড় ভূমিকা রাখতে পারে।'
তথ্য বলছে, জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিও কম উদ্বেগজনক নয়। ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ১২০ জন এবং বাকি ২০০৪ জনই রোহিঙ্গা। কেবল ২৯ মে থেকে এ পর্যন্ত ১৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৪ জন।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘রোগী শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা বাসায় গিয়ে পরীক্ষা করি। রেজাল্ট পজিটিভ হলে ওষুধ দেই, অনেকেই ভালোও হয়ে যায়। কিন্তু রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বাইরে গিয়ে কাজ করে আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসার পর দেরিতে চিকিৎসা নেয়, তখন অনেক সময় তা মরণঘাতী হয়ে ওঠে।’
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ম্যালেরিয়ায় ৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১ জন মারা যান। অপরদিকে, গত বছর (২০২৪ সালে) কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২১ হাজার ৪৫৪ জন এবং মারা যান ৭ জন।
কক্সবাজারে প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড়, আর ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকা—এই বাস্তবতায় মশাবাহিত রোগ যেন দ্বিগুণ হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এ মুহূর্তে জনসচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ। নতুবা এই দুই রোগে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হতে পারে।