জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা নেমে এসেছিলাম, যেই পরিবর্তন আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, সেই পরিবর্তন আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের চাওয়া ছিল জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ। সেটা নিয়েও টালবাহানা করা হচ্ছে।’

আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর শহরের স্টেশন বাজার গোলচত্বর এলাকায় মুক্তির সোপান শহীদ মিনারে এক পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।

বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে এখন রাজপথে নেমেছেন উল্লেখ করে সভায় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার জুলুম থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি দিতে আমরা কোনো আপস করিনি। জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আমরা মাঠে ছিলাম। আপনাদের সন্তানেরা পুলিশের বুলেটের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে ছিল। এখনো আমরা যারা জীবিত আছি, আপনারা যাঁরা জীবিত আছেন; আপনার, আমার দায়িত্ব যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা। তাঁদের সেই প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া।’

এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে যে গণহত্যা হয়েছে, আপনাদের সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে; দেশে গুম, খুন করা হয়েছে; বাংলাদেশে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে—সে সবকিছুর বিচার ছাড়াই কি আমরা নির্বাচনের দিকে যাব? আমাদের অবশ্য অবশ্যই এর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের রোডম্যাপ দিতে হবে। এ ছাড়া কীভাবে সেই শহীদ পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াব। কীভাবে সেই গুলিবিদ্ধ আহত জুলাই–যোদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়াব? এর জন্য অবশ্যই সুবিচার লাগবে এবং লাগবে সংস্কার। এই সংস্কারের সঙ্গে লাগবে নতুন বাংলাদেশ।’

এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের স্টেশন বাজার এলাকায় জুলাই পদযাত্রা শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। পরে পদযাত্রাটি স্টেশন বাজার এলাকার কদম ফোয়ারা চত্বর ঘুরে মুজিব সড়ক হয়ে মুক্তির সোপান শহীদ মিনারে পথসভায় মিলিত হয়।

আরও পড়ুনকর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশে তাদের ঠাঁই হয় নাই : নাহিদ ইসলাম৬ ঘণ্টা আগে

সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য তুলে ধরে পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এই শিল্প আপনার-আমার গর্ব হতে পারত; কিন্তু আমরা সেটা সারা বিশ্বে তুলে ধরতে পারিনি। আমরা আগামীর বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জের শিল্প ও ঐতিহ্য পুরো বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বুকে তুলে ধরব। এ জেলার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুচিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা হবে।’

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সঞ্চালনায় পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার ও সংগঠনটির যুব সংগঠক দ্রুতী আরণ্য চৌধুরী।

পথসভার মধ্যভাগে সিরাজগঞ্জে এনসিপির নেতৃত্বদানকারী নেতা হিসেবে জুলাই আন্দোলনের তিন কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ মোস্তাফা, মাহিন সরকার ও দ্রুতী আরণ্য চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। পরে জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির নেতা–কর্মীরা।

আরও পড়ুনগণভবন জয় করেছি, জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ০৬ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম স র জগঞ জ এনস প র পথসভ য়

এছাড়াও পড়ুন:

গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন

টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’

শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’

গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।

স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’

টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’

তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ