মুজিববাদের সঙ্গে আবার লড়াই শুরু হয়েছে
Published: 24th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই শুরু করেছিলাম, সেই লড়াই এখনো শেষ হয়নি। যে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, তা পাইনি। মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে আমাদের লড়াই। এ লড়াইয়ে সবাইকে আবারও শরিক হতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের এম সাইফুর রহমান পৌর মিলনায়ন প্রাঙ্গণে এনসিপির পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশে যে সংহতি তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দল ও মানুষের মধ্যে, এটি একটি শক্তি। দেশে এখন চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব ও দুর্বৃত্তায়নের যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা আমরা মেনে নেব না। এ রাজনীতি আমাদের ভেঙে দিতে হবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার থাকবে। কোনো সন্ত্রাসীকেও বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হবে না। আমরা মানবাধিকারের পক্ষে থাকব। আমরা কয় দিন আগে দেখেছি বিএনপির কর্মী, যুবদলের এক কর্মীকে কীভাবে হত্যা করেছে। আমরা সেই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা হবিগঞ্জে এসে সার্কিট হাউসে ওঠেন। বিকেল পাঁচটায় তাঁরা পদযাত্রা শুরু করেন। সার্কিট হাউস থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হবিগঞ্জের এম সাইফুর রহমান পৌর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে পথসভা শুরু হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ১৪ জুলাই রাত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজনৈতিক দিকে রূপলাভ করে। শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ রাজপথে নেমে এসেছিল। আজকে তাদের সম্মান জানাই। জুলাইয়ের নারীদের সম্মান জানাই।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘হবিগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। হবিগঞ্জের মানুষ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। মানুষ এখনো বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। হবিগঞ্জে একটি ভালো হাসপাতাল নেই। জেলার মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য এখনো যেতে হয় সিলেট ও ঢাকায়। শিক্ষার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এ সমস্যাগুলোকে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা সমস্যা হিসেবে দেখেননি।’
পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, দেশের নানা স্থানে তাঁদের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। দেশের মানুষ তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন, যা তাঁদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পথসভা সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ প্রমুখ।
পথসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ উদ্দিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র র জন ত ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন
টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’
তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।