জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই শুরু করেছিলাম, সেই লড়াই এখনো শেষ হয়নি। যে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, তা পাইনি। মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আবারও শুরু হয়েছে আমাদের লড়াই। এ লড়াইয়ে সবাইকে আবারও শরিক হতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের এম সাইফুর রহমান পৌর মিলনায়ন প্রাঙ্গণে এনসিপির পথসভায় নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশে যে সংহতি তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দল ও মানুষের মধ্যে, এটি একটি শক্তি। দেশে এখন চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব ও দুর্বৃত্তায়নের যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা আমরা মেনে নেব না। এ রাজনীতি আমাদের ভেঙে দিতে হবে।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার থাকবে। কোনো সন্ত্রাসীকেও বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হবে না। আমরা মানবাধিকারের পক্ষে থাকব। আমরা কয় দিন আগে দেখেছি বিএনপির কর্মী, যুবদলের এক কর্মীকে কীভাবে হত্যা করেছে। আমরা সেই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

এর আগে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা হবিগঞ্জে এসে সার্কিট হাউসে ওঠেন। বিকেল পাঁচটায় তাঁরা পদযাত্রা শুরু করেন। সার্কিট হাউস থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হবিগঞ্জের এম সাইফুর রহমান পৌর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে পথসভা শুরু হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ১৪ জুলাই রাত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজনৈতিক দিকে রূপলাভ করে। শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ রাজপথে নেমে এসেছিল। আজকে তাদের সম্মান জানাই। জুলাইয়ের নারীদের সম্মান জানাই।’

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘হবিগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। হবিগঞ্জের মানুষ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। মানুষ এখনো বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। হবিগঞ্জে একটি ভালো হাসপাতাল নেই। জেলার মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য এখনো যেতে হয় সিলেট ও ঢাকায়। শিক্ষার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এ সমস্যাগুলোকে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা সমস্যা হিসেবে দেখেননি।’

পথসভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, দেশের নানা স্থানে তাঁদের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। দেশের মানুষ তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন, যা তাঁদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পথসভা সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ প্রমুখ।

পথসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ উদ্দিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির ২৮তম দিনে জামালপুরে ১১ জন শহীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, পদযাত্রা ও পথসভা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। 

সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্য নেতারা। সেখানে থেকে হরিজন পল্লীতে যান তারা। পরে শহরের তমাল মোড় থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও জামালপুরের সাত উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। ফৌজদারি মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন এনসিপির নেতারা। 

পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “অনেকে বলছে, আমরা নাকি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছি, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। গণঅভ্যুত্থান না হলে আপনারা নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না। কোটা আন্দোলন থেকে যদি সরকার পতনের দিকে আন্দোলন না নিয়ে যেতাম, তাহলে শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচনের জন্য আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হতো।”

আরো পড়ুন:

বিকেলে এনসিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ

ফেনীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে পদযাত্রা 

তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে আছে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের সময় সর্ম্পূণভাবে সংগঠিত ছিলাম না। আমাদের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। ফলে, আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি অন্তর্বতী সরকারকে ও এই সময়ের রাজনীতিকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত করতে। আমাদের চেষ্টা এখনো জারি আছে।”

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জাতীয় সংসদকে দুই ভাগ করে ভোটের অনুপাতে উচ্চ কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে, যাতে জবাবদিহিমূলক ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায়। সেই উচ্চ কক্ষের বিষয়ে ঐক্যমত না হওয়ায় জুলাই সনদ আটকে আছে। জুলাই সনদের মাধ্যমে সর্বদলীয়ভাবে ৫ আগস্ট উদযাপন করা হবে।”

তিনি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ঐক্যমত কমিশন। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশ নিচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে সামনে যে নির্বাচন আসছে, সেই নির্বাচনে মৌলিক সংস্কার শেষে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। কারণ, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান এই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অন্যতম দাবি। সংস্কারের মাধ্যমে পুরনো আইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনোই নির্বাচন কমিশনে দলীয়করণ না হয়, পুলিশে দলীয়করণ না হয়, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় দলীয়করণ না হয়। আমরা সবখানে নিরপেক্ষতা চাই। ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনে সবাই একমত হয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”

পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন—জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য মশিউর রহমান শুভ, জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর রহমান বকুলসহ অনেকে।

এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ উপলক্ষে জামালপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পথসভা শেষে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/শোভন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 
  • এনসিপির নেতারা টাঙ্গাইলে, মাওলানা ভাসানীর কবর জিয়ারত
  • কিশোরগঞ্জে এনসিপির সভায় যুবলীগ নেতার বক্তব্য, একদিন পর বহিষ্কার
  • গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ
  • কিশোরগঞ্জে এনসিপির পথসভায় যোগ দেওয়ায় তিন নেতাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার
  • সেই পুরোনো ‘কালপ্রিটরাই’ আবার প্রশাসনে ফিরে এসেছে: সারজিস
  • যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • পুরোনো সিস্টেমে বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেব না: নাহিদ ইসলাম