কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
Published: 29th, July 2025 GMT
খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল যাত্রীবাহী বাসটি। ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই আসার পর হঠাৎ বাসটি ধাক্কা দেয় একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। দুর্ঘটনায় আহত হন বাসের দুই যাত্রী। আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মিরসরাই ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
যাত্রীদের বরাতে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বাসচালক। তাই বাসটি নিয়ে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের একজন দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসের সামনের আসনে আটকে ছিলেন। বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
আহত দুজন হলেন আনোয়ার হোসেন (২৮) ও মো.
দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের পাশের একটি গ্যারেজে কাজ করছিলেন মো. শামসুল আলম। তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাস ধাক্কা দিয়েছে। বাসের ভেতরে যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের বাস থেকে নামিয়ে আনেন। আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে একজন বাসে আটকে থাকায় বাসিন্দাদের পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস তাঁকে উদ্ধার করে। আহত দুজনই বাসের সামনের দুটি আসনের যাত্রী বলে জানান শামসুল আলম।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি নিউ বলেশ্বর পরিবহনের বলে জানান উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের মিরসরাই স্টেশনের দলনেতা হায়াতুন্নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আটকে পড়া এক যাত্রীকে অনেক কষ্টে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহত অপর ব্যক্তিকে আমরা আসার আগেই স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। যাত্রীরা জানিয়েছেন, চালক চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের একজনের অবস্থা গুরুতর। আমরা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি হেফাজতে নিয়েছি। তবে বাসের চালক দুর্ঘটনার পরেই সটকে পড়েছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫