যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের অভিজাত এজোয়ার রোড এলাকার কাছে একটি বিলাসবহুল বহুতল আবাসিক ভবনে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রীর ভাই ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন একটি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই ভবন মূলত আরব অঞ্চলের ধনকুবেরদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

উত্তর লন্ডনের নিউক্যাসল প্লেসে অবস্থিত ‘ওয়েস্টমার্ক টাওয়ার’-এর এই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ছিল ১৬ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন ও কোম্পানি হাউসের দলিল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই ‘বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্পত্তি কেনা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউসে নিবন্ধিত তথ্য অনুযায়ী, বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের (কোম্পানি নম্বর: ১২৫৮২৪৬২) দুই পরিচালক হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী। দুজনেরই জাতীয়তা বাংলাদেশি হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। কোম্পানিটি ২০২০ সালের ১ মে গঠিত হয় এবং বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত অফিস লন্ডনের ২২ গিলবার্ট স্ট্রিট। সম্পত্তিটি কেনা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বার্কলে হোমস’ থেকে ৯৯৯ বছরের ইজারা চুক্তিতে।

কোম্পানি হাউসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি এই অ্যাপার্টমেন্টের ওপর একটি পুনঃ মর্টগেজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও সেনক্যাপ লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। চার্জ দলিলে এই অ্যাপার্টমেন্টের ওপর ফিক্সড ও ফ্লোটিং চার্জ আরোপ করা হয়েছে।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই। এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও ব্যবসার জগতে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক দেশে সম্পদ অর্জন ও অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ে বাংলাদেশের সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে অন্তত ২০টি সম্পত্তি বিক্রয়, হস্তান্তর বা পুনঃ মর্টগেজ–সংক্রান্ত আবেদন জমা পড়েছে। সেই তালিকায় আনিসুজ্জামানের নামও রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আনিসুজ্জামান লন্ডনের রিজেন্টস পার্ক এলাকায় ১ কোটি পাউন্ড মূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউন হাউসসহ অন্তত চারটি সম্পত্তি বিক্রয় অথবা পুনঃ মর্টগেজের জন্য আবেদন করেছেন।

এর আগে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করে। এসব সম্পদের অর্থের উৎস যাচাই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে থাকা সম্পত্তির মধ্যে বেশির ভাগই লন্ডনের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য প র টম ন ট র য ক তর জ য র ভ ম মন ত র ন বন ধ র একট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ