লন্ডনে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাইয়ের ২৬ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট
Published: 30th, July 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের অভিজাত এজোয়ার রোড এলাকার কাছে একটি বিলাসবহুল বহুতল আবাসিক ভবনে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রীর ভাই ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন একটি আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। এই ভবন মূলত আরব অঞ্চলের ধনকুবেরদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
উত্তর লন্ডনের নিউক্যাসল প্লেসে অবস্থিত ‘ওয়েস্টমার্ক টাওয়ার’-এর এই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ছিল ১৬ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন ও কোম্পানি হাউসের দলিল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই ‘বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্পত্তি কেনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউসে নিবন্ধিত তথ্য অনুযায়ী, বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের (কোম্পানি নম্বর: ১২৫৮২৪৬২) দুই পরিচালক হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী। দুজনেরই জাতীয়তা বাংলাদেশি হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। কোম্পানিটি ২০২০ সালের ১ মে গঠিত হয় এবং বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত অফিস লন্ডনের ২২ গিলবার্ট স্ট্রিট। সম্পত্তিটি কেনা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বার্কলে হোমস’ থেকে ৯৯৯ বছরের ইজারা চুক্তিতে।
কোম্পানি হাউসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি এই অ্যাপার্টমেন্টের ওপর একটি পুনঃ মর্টগেজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বিটকম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও সেনক্যাপ লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। চার্জ দলিলে এই অ্যাপার্টমেন্টের ওপর ফিক্সড ও ফ্লোটিং চার্জ আরোপ করা হয়েছে।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই। এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও ব্যবসার জগতে প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক দেশে সম্পদ অর্জন ও অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগে তদন্ত চলছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ে বাংলাদেশের সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে অন্তত ২০টি সম্পত্তি বিক্রয়, হস্তান্তর বা পুনঃ মর্টগেজ–সংক্রান্ত আবেদন জমা পড়েছে। সেই তালিকায় আনিসুজ্জামানের নামও রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আনিসুজ্জামান লন্ডনের রিজেন্টস পার্ক এলাকায় ১ কোটি পাউন্ড মূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউন হাউসসহ অন্তত চারটি সম্পত্তি বিক্রয় অথবা পুনঃ মর্টগেজের জন্য আবেদন করেছেন।
এর আগে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করে। এসব সম্পদের অর্থের উৎস যাচাই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরে থাকা সম্পত্তির মধ্যে বেশির ভাগই লন্ডনের অভিজাত এলাকায় অবস্থিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য প র টম ন ট র য ক তর জ য র ভ ম মন ত র ন বন ধ র একট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।