বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের পথে সরকার কতটা এগুলো?
Published: 5th, August 2025 GMT
১৯৭১ সালে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলা, যেখানে নাগরিকদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের অন্যতম সাংবিধানিক অঙ্গীকার হলো প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বহুলাংশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। আবার কিছু নির্বাচন ছিল একতরফা ও বিতর্কিত, যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় কিংবা সামরিক সরকারের অধীনে।
সংবিধান থেকে তত্ত্বাধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বস্তুত নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে পড়েছিল এবং জবাবদিহির কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। ফলে দেশের সর্বস্তরে দলীয়করণ, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছিল। তাই এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।
আরো পড়ুন:
ফিরে দেখা আমাদের জুলাই বিপ্লব
জুলাই গণঅভ্যুত্থান: সিরাজগঞ্জে ৪ আগস্ট নিহত হয় ২৯ জন
আশার কথা হলো, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে এবং ৮ই আগস্ট তারিখে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল নির্বাচনব্যবস্থাসহ দেশের বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন, যাতে দেশে আর কর্তৃত্ববাদী শাসন জেঁকে বসতে না পারে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অচলাবস্থার অবসান হয় এবং সর্বজনীন ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও জবাবদিহির কাঠামো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়। জনগণের আরও প্রত্যাশা ছিল জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করা এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচ আয়োজন করা। সংক্ষেপে বলতে গেলে সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা হলো, বিচার, সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
প্রথমত, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামীদের বিচার শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে প্রধান অভিযুক্তদের বিচার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য খাত, শ্রম, স্থানীয় সরকার এবং নারী বিষয়ক আরও পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের কার্যক্রম শেষ করে ৭০০-এর অধিক সুপারিশ প্রণয়ন করে। এরপর উক্ত কমিশনগুলোর সুপারিশ সম্পর্কে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং একটি জাতীয় সনদ প্রণয়নের জন্য ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ নামে নতুন একটি কমিশন গঠন করার কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের মতামত সংগ্রহের জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পাঁচটি স্বতন্ত্র স্প্রেডশিট তৈরি করে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরকারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে স্প্রেডশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ৫টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে এ স্প্রেডশিটগুলো তৈরি করা হয় এবং ০৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে তা ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামত প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়। ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ২০টি।
স্প্রেডশিট প্রেরণের পর কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে উল্লেখিত সুপারিশের ব্যাপারে বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়। স্প্রেডশিটে মতামত সংগ্রহের পরবর্তী ধাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করে। ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ পর্যন্ত মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রথম পর্বের ওই বৈঠকগুলোতে অনেকগুলো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরিবর্তন হয়। তবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ পর্বে ঐকমত্য হয়নি। প্রথম পর্বের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি বা দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি সেসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে নিয়ে ২ জুন ২০২৫ থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত উক্ত আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
শেষ দিনের আলোচনা শেষে গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি সংস্কার বিষয়ে দল ও জোটগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। তবে এসবের কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট আছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো হলো: ১. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০; ২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব; ৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; ৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান; ৫. বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ: (ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ ও (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ; ৬. জরুরি অবস্থা ঘোষণা; ৭. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; ৮. সংবিধান সংশোধন; ৯. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান; ১০. নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত; ১১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; ১২. পুলিশ কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব; ১৩. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; ১৪. উচ্চকক্ষের গঠন ও এর সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার, ইত্যাদি; ১৫. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি; ১৬. তত্ত্বাবধায়ক সরকার; ১৭. নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব; ১৮. রাষ্ট্রের মূলনীতি; ১৯. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব।
ইতোমধ্যে জাতীয় সনদের একটি খসড়া রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, বাস্তবায়নের ওপর আলোচনার পর খুব শীঘ্রই জাতীয় সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারি করা-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়-সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো।
তৃতীয়ত, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে এবং এ জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০ হাজার সেনাসদস্য নির্বাচনী ডিউটিতে থাকবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এবং নির্বাচনকে ঘিরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় আরো জোরদার করতে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টার খোলার নির্দেশনা আদেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন ‘ফুল গিয়ারে’ প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আমরা আশা করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্ধারিত সময়ে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটবে। আর সেটিই হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা।
নেসার আমিন: লেখক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন গণত ন ত র ক ক ল ন সরক র ন র জন য অন ষ ঠ ত সরক র র জনগণ র প রস ত মন ত র আম দ র প রথম মত মত আগস ট র অবস
এছাড়াও পড়ুন:
সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।
এরপর ওই বিধান নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি ও ছোট দলগুলো। ছোট দলগুলো এ নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও উৎকণ্ঠার কথা কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানায়। একপর্যায়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আপত্তি জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ এবং নির্দেশনায় আরপিওতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।