নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘ব্লাসফেমি’
Published: 5th, August 2025 GMT
এই লেখার যে উপজীব্য, তার বিরুদ্ধ যুক্তি দিয়েই প্রথমে কথা বলা যাক। বেশ কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা হচ্ছে, হঠাৎ কোনো সামরিক কর্মকর্তার হাত দিয়ে নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থার মধ্য দিয়েই বিভিন্ন দেশে ডেমাগগরা ক্ষমতায় আসছেন এবং তাঁদের হাতেই গণতন্ত্র ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে নানা ধরনের স্বৈরাচারী ব্যবস্থা মাথাচাড়া দিচ্ছে।
এ পরিস্থিতি গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইউরোপ ও আমেরিকার মাটিতে যেমন হয়েছে, হচ্ছে আমাদের ঠিক পাশের দেশটিতেও। আমরা এ তথ্য মাথায় রাখব যে ২০০৬ সালের পর থেকে পৃথিবীতে মোটাদাগে কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা নিয়মিতভাবেই কমেছে। লেখাটা পড়ার পরে যে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা আছে, সেটা আগেই করে রাখা যাক—এ পরিস্থিতির মধ্যে তাহলে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রবেশ এবং টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন কি তাহলে ইউটোপিয়া?
এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আরেকটি প্রশ্ন করে পরবর্তী আলোচনায় যাওয়া যাক। ‘শেখ হাসিনা’ কেন বর্বর স্বৈরাচারের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিলেন? এর জবাব সম্ভবত এভাবে দেওয়া যায়, তিনি যে পথে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন, তাতে তাঁর ‘শেখ হাসিনা’ হয়ে ওঠাই অনিবার্য ছিল। অতীতে আরও অনেকে তাঁর মতো ‘শেখ হাসিনা’ই হয়ে উঠেছিলেন স্রেফ একটি কারণে—তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্ষমতায় থাকার জন্য আর জনগণের ম্যান্ডেটের তোয়াক্কা করবেন না।
শেখ হাসিনার সময়ে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা একটা রীতিতে পরিণত হয়েছিল। একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই–বা লাভ কী, এ ধরনের আলাপ সামনে আনার চেষ্টা হয়েছে ‘কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন’-এর টোপ দিয়ে।
আমরা মনে রাখব, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ আর মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফোকাস করে আধা স্বৈরাচারী শাসন চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ‘এশিয়ান ভ্যালুজ’ (এশীয় মূল্যবোধ) তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্ডিতেরা দুর্দান্ত সব যুক্তি ও উদাহরণ আমাদের সামনে এনেছেন।
অবিশ্বাস্যভাবে শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর একই আলাপ মাঠে ‘নামানো হয়েছে’। এবার অবশ্য যুক্তি ভিন্ন। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, একটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেও তাতে নাকি আবারও ক্ষমতায় লুটপাটকারীরাই আসবে। এবং অদূর ভবিষ্যতে একটা নির্বাচন নাকি বিপ্লবের—জুলাই যদিও বিপ্লব নয়, গণ-অভ্যুত্থান—স্পিরিট নষ্ট করবে। তাঁদের নিদান হলো একটা বিপ্লবী সরকার করে, দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকে, সংবিধান নতুন করে লেখাসহ রাষ্ট্রের সব রকমের সংস্কার শেষ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়া। এতেই নাকি ভবিষ্যতের সব নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিশ্ছিদ্র হয়ে উঠবে। এভাবে ভালো সংবিধান বা আইন বানিয়ে আসলেই কি নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিশ্ছিদ্র করা যায়?
আরও পড়ুনশুধুই নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন?১৩ জুন ২০২৫একটি ভালো নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এগিয়ে যাবে, এ নিশ্চয়তা নেই। এ সত্য মাথা পেতে স্বীকার করে নিয়েও বলছি, ভালো নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপটি দেওয়া সম্ভব নয়। অধিকন্তু, ভালো নির্বাচনকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। একটা ভালো নির্বাচনের প্রভাব গভীর ও ব্যাপক।
জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী থাকে। সে রকম একটি সরকার জনস্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে দেশের ভেতরের ও বাইরের যেকোনো শক্তির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুদ্ধ করতে পারে। সেই সরকারকে এমনকি ইচ্ছা না থাকলেও জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াতে হয়। কারণ, মেয়াদান্তে তাকে আবার ভোট চাইতে জনগণের কাছেই যেতে হবে। ঠিক একই কারণে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার প্রতি সংবেদনশীল থাকে, সম্ভব হলে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে।
গণতন্ত্রের আলাপ করা হবে, কিন্তু নির্বাচনের প্রয়োজন ও উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না, এ দুটি বিষয় একসঙ্গে চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকে এ ধরনের প্রশ্ন গণতন্ত্রের সঙ্গে পরিষ্কার ‘ব্লাসফেমি’। এই ‘ব্লাসফেমি’ সব সময় যে নির্বাচন নাকচ করার মাধ্যমে করা হয় তা নয়, চতুর মানুষেরা এটা করেন নির্বাচনের সঙ্গে কিছু অযৌক্তিক শর্ত জুড়ে দেওয়ার মাধ্যমে।ওদিকে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হওয়া সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রের ভেতরের শক্তিশালী কোনো গোষ্ঠীর পক্ষে থাকে। শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে যে চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্র্যাসি) চালু হয়েছিল, তাতে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের মধ্যে একধরনের চক্র তৈরি হয়েছিল। সরকার কোটি কোটি সাধারণ নাগরিকের স্বার্থ না দেখে দেখত সেই মানুষগুলোর স্বার্থ। এভাবেই নাগরিকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অলিগার্কদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের যাবতীয় নীতি পরিচালিত হতো।
অনির্বাচিত সরকার দেশের বাইরে থেকেও চাপের মধ্যে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার শুধু অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশি নানা শক্তির সঙ্গে আপস করেছিল।
জনগণের রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া এভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের আর কোনো ঝুঁকি থাকে না। কারণ, বৃহৎ জনগোষ্ঠী ক্ষুব্ধ হলেও পরবর্তী ভোটে সরকারের হিসাব চুকিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে না। আর মানুষ যখন কোনো ন্যায্য অধিকার নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে নামতে চায়, সরকার তখন নিপীড়ক হয়ে ওঠে। কারণ, এ ধরনের সরকার সারাক্ষণ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত থাকে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের সময় তো বটেই, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোরদের অরাজনৈতিক আন্দোলনেও সরকারকে ভীত হয়ে তাদের ওপর মারমুখী আচরণ করতে দেখেছি। আর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার প্রতিবাদে নামা শিক্ষার্থীদের ওপরে ভয়ংকর আক্রমণের ঘটনাই রচনা করল আমাদের অমোচনীয় ইতিহাস।
নির্বাচনের অপরিহার্যতা যদি আমরা স্বীকার করি, তাহলে তলিয়ে দেখা যাক, বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ আছে কি না। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের ওপর মানুষের গগনচুম্বী প্রত্যাশা ছিল।
একদিকে এর কারণ ছিল শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর সাফল্যজনিত প্রত্যাশা ছিল, অন্যদিকে ছিল অধ্যাপক ইউনূসের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ। এক বছর পরে এসে আমাদের বলতেই হচ্ছে, দেশটিকে আমরা যে জায়গায় দেখতে চেয়েছিলাম, তার কাছাকাছিও যাওয়া যায়নি। মন্তব্যটি করছি শেখ হাসিনার ভয়ংকর অপশাসনে রাষ্ট্রের সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার বাস্তবতা মাথায় রেখেই।
নির্বাচন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ গণতন ত র র সরক র র ক ষমত য জনগণ র আম দ র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদে সংরক্ষিত আসন সংস্কার: আশার আলো নাকি মরীচিকা
সংসদে নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণ এবং সেখানে সরাসরি নির্বাচনের দাবি বহুদিনের। জুলাই-পরবর্তী সময়ে বৈষম্যমূলক এই ব্যবস্থা সংস্কারে আশার আলো দেখা দিয়েছিল।
কিন্তু অচিরেই সেই আলো ক্ষীণ হতে শুরু করল। নারীদের বাদ দিয়েই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলল।
ঐকমত্য কমিশনে ‘ঐকমত্য’ হলো—সংসদে আগের মতোই তাদের জন্য ৫০টি আসন থাকবে এবং আগামী নির্বাচনে ৩০০ সাধারণ আসনে অন্তত ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানানো হবে।
এখানে প্রশ্ন হলো, নাগরিক সমাজের দাবি এবং তিনটি সংস্কার কমিশনেরই সুপারিশ ছিল নারীর জন্য আসন সংরক্ষণ ও সরাসরি নির্বাচনের।
গবেষণাও বারবার দেখিয়েছে, বর্তমান সংরক্ষিত পদ্ধতি নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন ঘটাতে পারছে না এবং কার্যকর ফলাফল বয়ে আনতে পারছে না। নারীরা সংসদে গেলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং কাজের সুযোগ সীমিত থেকে যায়।
তাহলে সেখানে গবেষণার ফলাফল, জনদাবি উপেক্ষা করে পুরোনো ব্যবস্থা কেন বহাল রাখা হলো?
আরও পড়ুনসংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন: ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান পর্ব হয়ে বর্তমান চিত্র২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সংবিধান সংশোধনের দোহাই দিয়ে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ খারিজ করা হলো, অথচ অন্যান্য সংস্কারের ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গ তো সামনে আসছে না।
যদি অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কার সম্ভব হয়, তবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনেও সংস্কার সম্ভব হওয়া উচিত।
২০২৫ সালে এসেও এই অকার্যকর পদ্ধতি বহাল রাখা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় না। কারণ, এর সঙ্গে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ও জড়িত।
রাষ্ট্র প্রতিবছর ৫০টি সংরক্ষিত আসনের জন্য প্রায় ৮ কোটির বেশি টাকা ব্যয় করছে। এটি একটি বড় বিনিয়োগ। কিন্তু এই বিনিয়োগের পূর্ণ সুফল আসছে না।
সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা গেলে এই বিনিয়োগ সমাজ ও অর্থনীতিতে বহুগুণ রিটার্ন দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাও সেটাই প্রমাণ করেছে। যেমন মেক্সিকোতে ২০১৪ সালের পারিটি আইন কার্যকর হওয়ার পর মাতৃমৃত্যু ২০০০ সালের প্রতি লাখে ১০৭ জন থেকে ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ জনে (উইলসন সেন্টার, ২০২৩, রয়টার্স, ২০২৩)।
ওইসিডি দেশগুলোতে দেখা গেছে, নারী কর্মসংস্থান ১০ শতাংশ বাড়লে জিডিপি ২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় (ওইসিডি, ২০২২)।
আরও পড়ুনসংরক্ষিত নারী আসন: তাঁরা কেন বাদ পড়লেন১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ফ্রান্সে নারী প্রার্থী বাধ্যতামূলক করার ফলে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং জিডিপিতে প্রতিবছর অতিরিক্ত ০.৫-০.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হয়েছে (ইউরোপিয়ান কমিশন, ২০১৮)।
যুক্তরাজ্যে নারী-পুরুষ সমান কর্মসংস্থান হলে অর্থনীতিতে বাড়তি ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে (ফাওসেট সোসাইটি, ২০২৪)।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারী কোটা চালুর পর উন্নয়নশীল দেশে মাতৃমৃত্যু ৮-১২ শতাংশ কমেছে, যা সরাসরি স্বাস্থ্য ব্যয় সাশ্রয় ও শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার এখনো প্রতি লাখে ১৫৬ জন (বিবিএস, ২০২২) যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০-এ নামানোর লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে।
আরও পড়ুননারী সংসদ সদস্য: সংরক্ষিত নাকি সরাসরি ভোটে?০২ জুন ২০২৫একইভাবে ২০২৪ সালের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার সহিংসতার শিকার হয়েছেন (ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ, ২০২৪), যার ফলে পরিবার ও রাষ্ট্র উভয়কেই অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।
বর্তমান সংরক্ষিত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এসব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে পারছে না।
আবার সাধারণ আসনে কমিশনের ৫ শতাংশ মনোনয়নের আহ্বানে কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, ফলে রাজনৈতিক দলগুলো সহজেই তা এড়িয়ে যেতে পারে। এতে সাধারণ আসনে নারীর মনোনয়ন আরও কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
তাই এখন সময় এসেছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন চালু করতে হবে, যাতে নারী এমপিরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে যেতে পারেন। সাধারণ আসনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, নারীর নেতৃত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। বাংলাদেশ যদি এখনই পদক্ষেপ নেয়, তবে কেবল নারী নয়, গোটা দেশই এর সুফল পাবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে, মানবসম্পদ উন্নত হবে এবং গণতন্ত্রও হবে আরও টেকসই।ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন আরপিও (রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার) সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, নারীর জন্য মনোনয়নের হার ন্যূনতম ২০ শতাংশ করে একটি ধারা সংযোজন করতে হবে।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল এ নিয়ম মানতে ব্যর্থ হলে তাদের জন্য আর্থিক জরিমানার বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে হবে। অন্যথায় নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
একই সঙ্গে নারীদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, নারীদের অনলাইন–অফলাইন যে হয়রানির শিকার হতে হয়, তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; যাতে তাঁরা হয়রানি ও সহিংসতার ভয় ছাড়াই প্রার্থী হতে বা দলে যুক্ত হতে পারেন। নারী প্রার্থীদের জন্য জনতহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, নারীর নেতৃত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়।
বাংলাদেশ যদি এখনই পদক্ষেপ নেয়, তবে কেবল নারী নয়, গোটা দেশই এর সুফল পাবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়বে, মানবসম্পদ উন্নত হবে এবং গণতন্ত্রও হবে আরও টেকসই।
লিপিকা বিশ্বাস নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নবিষয়ক বিশ্লেষক