সিলেট, চট্টগ্রাম বা পঞ্চগড়ের পাহাড়ি অঞ্চল নয়। গাজীপুরের সমতল ভূমিতেই এখন দেখা মিলছে সবুজে ঘেরা চা বাগানের। আর এই বিস্ময়কর উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। 

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও অদম্য পরিশ্রমে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, চা চাষ শুধু পাহাড়েই নয়- সমতলেও বাণিজ্যিকভাবে করা সম্ভব।

কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামে প্রায় আট বিঘা জমিতে সাত বছরের শ্রমে গড়ে উঠেছে তার চারটি দৃষ্টিনন্দন চা বাগান। তিন বছর ধরে এসব বাগান থেকে সবুজ চা উৎপাদন করছেন তিনি। যা এখন নিয়মিত যাচ্ছে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাজারে। শিগগিরই খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা করছেন এই অধ্যাপক।

রাজধানীর উত্তরার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক লুৎফর রহমান। কর্মজীবনের শুরুতে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৪টি চা বাগানে ৩৫ বছর ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। সেসব বাগানের মাটির গুণাগুণের সঙ্গে কাপাসিয়ার মাটির মিল খুঁজে পান তিনি। সেখান থেকেই মাথায় আসে নিজ এলাকায় চা চাষের পরিকল্পনা।

২০১৯ সালে সিলেট থেকে কলমের চারা এনে প্রথমবারের মতো সমতলের এঁটেল মাটিতে রোপণ করেন। ফলাফল আশানুরূপ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে বানার নদীর তীরবর্তী দুই বিঘা বেলে-দোআঁশ জমিতেও চারা রোপণ করেন। বর্তমানে পুরো আট বিঘা জমিতে প্রায় ২০ হাজার চা গাছ বেড়ে উঠেছে।

পরিপুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠা চা গাছ।

চা বাগানের জন্য সবচেয়ে জরুরি শর্ত হলো, জমিতে পানি যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। এজন্য বাগানে তৈরি করা হয়েছে পানি সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা। পাশাপাশি সিলেট থেকে আনা হয়েছে কাঠজাতীয় গাছ, যেন ছায়ার মধ্যেই চা গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

প্রতিটি চারা ২ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে। একর প্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয় বাগান তৈরি করতে। সঠিক পরিচর্যায় ৩৫-৪০ বছর পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব একেকটি গাছ থেকে। শুধু কাঁচা পাতা বিক্রি করলেও একরপ্রতি বছরে আয় হয় প্রায় এক লাখ টাকা। আর প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করলে তা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল কাউয়ুম হোসেন বলেন, “স্যারের উদ্যোগ দেখে এলাকার অনেকেই এখন চা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পতিত জমির মালিকরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, খোঁজখবর করছেন।”

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আউলিয়া খাতুন জানান, কাপাসিয়ার মাটিতে চা চাষের এ সাফল্য স্থানীয় কৃষকদের জন্য দারুণ উৎসাহের। আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে প্রতি মাসে ১২-১৫ কেজি সবুজ চা উৎপাদন হচ্ছে, যা পাইকাররা প্রতি কেজি এক হাজার টাকায় কিনছেন। শিগগিরই মাসিক উৎপাদন ৩০-৩৫ কেজিতে উন্নীত হবে বলে আশা লুৎফর রহমানের। ভবিষ্যতে অর্থডক্স বা সিটিসি পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে স্থানীয় বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।

গাজীপুরের সমতল ভূমিতে চা বাগান কেবল কৃষিতে নতুন দিগন্তই উন্মোচন করছে না, একইসঙ্গে বদলে দিচ্ছে স্থানীয়দের চিন্তাধারাও।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘প্রিয়দর্শিনী’খ্যাত নায়িকা আরিফা পারভীন মৌসুমী। সোমবার (৩ নভেম্বর) ৫২ বছর বয়স পূর্ণ করলেন এই অভিনেত্রী। বিশেষ এই দিনে দেশে নেই, সন্তানদের সঙ্গে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মৌসুমী। 

মৌসুমী যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তার স্বামী ওমর সানী। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে চিত্রনায়ক ওমর সানী কয়েকটি ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করে স্ত্রীকে ভালোবাসার বার্তা দিয়েছেন।  

আরো পড়ুন:

মৌসুমীকে বিয়ে করা কি ভুল ছিল ওমর সানীর

তারকাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ

এসব ছবির ক্যাপশনে ওমর সানী লেখেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। দূরে থেকেও আমরা কাছে এটাই বাস্তব, আর যারা আমাদেরকে নিয়ে উল্টাপাল্টা নিউজ করে ওরা হচ্ছে…। শুভ জন্মদিন।” 

জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা প্রিয় অভিনেত্রীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওমর সানীর এই পোস্টে নেটিজেনদের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মৌসুমীকে।  

চিত্রনায়িকা মুনমুন লেখেন, “শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী, প্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী আপা।” শাহনূর লেখেন, “শুভ জন্মদিন আপু।” আইরিন সুলতানা লেখেন, “শুভ জন্মদিন।” এমন অসংখ্য মন্তব্য কমেন্ট বক্সে ভেসে বেড়াচ্ছে।  

১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন মৌসুমী। তার বাবার নাম নাজমুজ্জামান মনি ও মা শামীমা আখতার জামান। ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মৌসুমী। এরপর ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন, যার ওপর ভিত্তি করে তিনি ১৯৯০ সালে টেলিভিশনের বাণিজ্যিক ধারার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। 

চিত্রনায়িকা হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে মৌসুমীর অভিষেক ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে। এ সিনেমায় সালমান শাহর সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন এ অভিনেত্রী। প্রথম সিনেমাতে নিজেদের মেধার জানান দেন সালমান শাহ ও মৌসুমী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দুজনই ঢালিউডে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নেন। তারপর তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢালিউডে মেধার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন মৌসুমী। 

নারগিস আক্তার পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’ ও চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এই অভিনেত্রী পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ