স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সুপার সিক্সে বাংলাদেশ
Published: 22nd, January 2025 GMT
নারী ক্রিকেটে বুধবার সকালটা জয়গাথায় ভরা। সকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারানোর পর অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সুপার সিক্সে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। মালয়েশিয়ার বাঙ্গিতে ১৮ রানের এই জয়ে সেমিফাইনালের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল সুমাইয়া আক্তারের দল। আগে ব্যাট করে স্কটল্যান্ডকে ১২২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল সুমাইয়া আক্তারের বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে আট উইকেটে ১০৩ রানে থামে স্কটল্যান্ডের ইনিংস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই হারায় ওপেনার সুমাইয়া আক্তার সুবর্ণার উইকেট। উইকেটরক্ষক ব্যাটার জুয়াইরিয়া ফেরদৌস ও ফাহমিদা ছোঁয়ার ২৬ রানের জুটিতে কিছুটা স্থিরতা আসে। তবে ১৪ রান করে রানআউট হন ফাহমিদা। এরপর জুয়াইরিয়া ২০ রান করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
মাঝের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ৫০ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে অধিনায়ক সুমাইয়া আক্তার ও আফিয়া আশিমার দৃঢ়তায় দলটি ঘুরে দাঁড়ায়। আফিয়া ২১ রান করে আউট হলেও সুমাইয়ার ৩৬ বলে অপরাজিত ২৯ রানে ভর করে ১২২ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
১২২ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুটা দারুণ করে স্কটল্যান্ড। প্রথম ৪ ওভারে বিনা উইকেটে তোলে ১৯ রান। তবে পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে এনে দেয় ব্রেকথ্রু। আনিসা আক্তার আউট করেন ওপেনার ইমা ওয়ালসিংহামকে (১১)। একই ওভারে সাদিয়া ইসলাম রানআউট করেন পিপা কেলিকে।
পিপা স্প্রাউল ও নিয়াম মুইরের ৫০ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় স্কটল্যান্ড। তবে ২২ রানে থাকা নিয়ামকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন হাবিবা ইসলাম। এরপর চাপ নিতে না পেরে একের পর এক উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। স্কটিশদের হয়ে পিপা স্প্রাউল সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। তবে তার ইনিংসটি থামে আনিসার স্টাম্পিংয়ে। শেষ দিকে স্কটল্যান্ডের ব্যাটাররা আর লড়াই জমাতে পারেননি।
বাংলাদেশের হয়ে লেগ স্পিনার আনিসা আক্তার ২৫ রানে নেন ৪ উইকেট। টপ অর্ডারের দুই ব্যাটারকে বোল্ড করে তিনি দেখান অসাধারণ নৈপুণ্য।
এই জয়ে সুপার সিক্সে পৌঁছে এক নম্বর গ্রুপে খেলবে বাংলাদেশ। সেখানে দুটি ম্যাচে ভালো করতে পারলেই জায়গা হবে সেমিফাইনালে। এর আগে নেপালের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুই উইকেটে হারে বাংলাদেশ। তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে দলটি আবারও ছন্দে ফিরেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স কটল য ন ড র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।