সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিনাভোটে জয়ী হয়েছেন বিএনপি ও জাময়াতপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭টি পদের বিপরীতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী একক প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, বাধা প্রদান ও ভয় দেখানোয় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয়ী প্যানেলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিক সরকার।      

সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট কায়ছার আহমেদ লিটন জানান, ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ৩০ জানুয়ারি এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তফসিল অনুযায়ী ১৬ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ১৭টি পদের বিপরীতে ৩টি পদ ছাড়া বাকি ১৪টি পদে একটি করে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়। ২২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান কামাল (জাপা), সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ (বিএনপি) ও অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ) এবং ক্রীড়া ও সাস্কৃতিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মুজাহিদ বিন রহমান মিঠুন (জাপা) মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নেন। এ অবস্থায় ১৭টি পদে সবাই একক প্রার্থী হওয়ায় অ্যাডভোকেট শাকিল মোহাম্মদ শরিফুর হায়দার রফিক সরকার (বিএনপি) ও অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম সেলিম (জামায়াত) সমর্থিত রফিক-সেলিম একক প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীপন্থী কয়েকজন আইনজীবী জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে বহিরাগত লোকজন এসে আমাদের প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম হায়দারকে লাঞ্চিত করে এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নির্বাচনে অংশ না নিতে প্রকাশ্যে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পাশাপাশি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ও দেখানো হয়। ৫ আগষ্ট পটপরিবর্তের পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অপসারিত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান ও অপসারিত জিপি অ্যাডভোকেট রাখালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করায় তারা বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন। যে কারণে ঝামেলা এড়াতে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা এবারের নির্বাচনে অংশ নেননি।  

নির্বাচন প্রসঙ্গে সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত সরকারের আমলে সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতি বছর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতো। যে নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরাও বিজয়ী হয়েছেন। এবারই প্রথম বিনাভোটে আইনজীবী সমিতির কমিটি গঠিত হওয়ায় আইনজীবীরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন। অথচ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোটাধিকার নিয়ে নানা আন্দোলন করলেও এখন তারাই বিনাভোটে নির্বাচিত হলেন।

এ বিষয়ে নবনির্বাচিত সভাপতি ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট রফিক সরকার বলেন, সমিতির ১৭টি পদের মধ্যে সভাপতিসহ ১২টিতে বিএনপি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ ৫টি পদে জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।

অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়নি। বহিরাগত লোকজনের ভয়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এমন বাধা আমরাও অতীতে অনেক পেয়েছি, কিন্তু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়নি। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইনজ ব র ব এনপ সমর থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: নাহিদের জবানবন্দি পেশ
  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট