অনলাইনে পরিচয়, দলবদ্ধ ধর্ষণের পর স্কুলছাত্রীর বস্তাবন্দি লাশ হাতিরঝিলে
Published: 3rd, February 2025 GMT
রাজধানীর হাতিরঝিল লেক থেকে এক স্কুলছাত্রীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শেষে হত্যার পর বস্তাবন্দী করে লাশ গুমের উদ্দেশে হাতিরঝিলে ফেলা হয়। এই ঘটনায় রবিন ও রাব্বি মৃধা নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিন পেশায় গাড়িচালক এবং রাব্বি নির্দিষ্ট পেশা নেই।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান।
তিনি বলেন, নিহত কিশোরী গত ১৬ জানুয়ারি কেনাকাটা করার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ তারিখে একটি মামলা করেন নিহতের বাবা। নিহত দক্ষিণখানের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।
মামলার তদন্তে নেমে কিশোরীর মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে ৩০ জানুয়ারি রবিন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাব্বি মৃধা নামের আরও এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এরপর রবিন ও রাব্বিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত ডিসি জানান, দুই যুবক পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর সঙ্গে অনলাইনে পরিচয়ের সূত্র ধরে মহাখালীর একটি ফ্ল্যাটে ডেকে আনা হয়। তারপর তারা পাঁচজন মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। এতে তার মৃত্যু হলে মরদেহ হাতিরঝিলে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই রোববার ওই কিশোরীর মরদেহ হাতিরঝিল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ডিসি রওনক জাহান জানান, মেয়েটিকে হত্যার দায় স্বীকার করে আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রবিন ও রাব্বি মৃধা। সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মার্চে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ নারী
গত মার্চে ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২৫ কন্যাসহ ১৬৩ জনকে। ১৮ কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুই কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দুই কন্যা ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাম্প্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩০ কন্যাসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন কন্যাসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ কন্যাসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ কন্যাসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কন্যাসহ দুইজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর ধারা জেন্ডার সমতা। এটি উপেক্ষা করা কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সংসদে এক-তৃতীয়াংশ আসন ও সরাসরি নির্বাচন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৪টি। এর আগে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯৯ কন্যাশিশু।