সরকারি জমি দখলে রেখে কোটি টাকার ব্যবসা করছে উত্তরাঞ্চলের আট শতাধিক পেট্রোল পাম্প। শুধু তাই নয়, প্রায় এক দশক লিজ নবায়ন করেনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বারবার তাগাদা দিলেও নড়চড় নেই। উচ্ছেদে গেলেই দখল টিকিয়ে রাখতে মালিকরা জিম্মি করেন গ্রাহকদের।
যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ উত্তরাঞ্চলে ধর্মঘট ডাকে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ফলে গতকাল বুধবার সকাল থেকে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ব্যাহত হয় সেচকাজ। প্রায় ৯ ঘণ্টা ভুগিয়ে বিকেলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, বগুড়া জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন তারা। যদিও জেলা প্রশাসক হোসনে আফরোজ বলেছেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় খাস জমিতে গড়ে উঠেছে আট শতাধিক পেট্রোল পাম্প। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে যতটুকু জমি লিজ নেওয়া, তার চেয়ে মালিকরা দখল করেছেন বেশি। সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে চলে রমরমা ব্যবসা। ২০১৫ সালের আগে এসব জমি লিজ নেওয়া হলেও মালিকরা আর নবায়ন করেননি।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দুটি ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালায় বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পাম্প মালিকরা উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার সব পাম্প বুধবার সকালে বন্ধ রাখেন। পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েন মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও বাসচালকরা। বোরো আবাদের সময় হওয়ায় ডিজেলের অভাবে সেচ নিয়েও বিপাকে পড়েন চাষিরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, অবৈধ স্থাপনা রক্ষায় পাম্প মালিকরা গ্রাহকের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে ধর্মঘট পালন করেছেন। সওজ উচ্ছেদ অভিযান চালালেই তারা প্রতিবার এভাবে মানুষকে জিম্মি করেন।
রাজশাহীর কুমারপাড়ার গুলগফুর পেট্রোল পাম্পে তেল না পেয়ে ফিরে যাওয়া অনেকের মতো বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা আগে দেওয়া উচিত ছিল। কাজে যাওয়ার সময় তেল না পেলে বাইক চলবে কীভাবে?’
পাম্পের হিসাবরক্ষক আনন্দ কুমার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৮টায় কর্মবিরতি পালনের নির্দেশ আসে। আমরাও জানতাম না। নির্দেশ পেয়ে কর্মবিরতি করছি।’
রাজশাহী জেলা তেলপাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মনিমুল হক বলেন, ‘সরকারি জমি লিজ নিয়ে ব্যবহার করি। তারা জমি পেলে সময় দিতে পারত।’ তিনি বলেন, ‘লিজ উচ্চমূল্য হওয়ায় ১০ বছর নবায়ন করতে পারছি না। নবায়নের অর্থ সহনশীল করতে হবে।’
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বরত সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সুরুজ মিয়া জানান, উচ্ছেদের আগে কয়েক দফা নোটিশ দিয়েছেন তারা।
বগুড়ায় সওজের জমিতে নেতার পাম্প
বগুড়ার আদমদীঘির আনিকা ফিলিং স্টেশনে মঙ্গলবার অভিযানে গেলে মালিক আব্দুল জলিল তিন দিনের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। অভিযান স্থগিত হলেও রাতেই ধর্মঘট শুরু হয়।
সওজ জানায়, আনিকা পেট্রোল পাম্প তাদের কাছ থেকে ৭ শতক জমি লিজ নিলেও দখল করেছে ৯০। সেখানে পেট্রোল পাম্পসহ আবাসিক স্থাপনা গড়েছে। এতে সড়ক সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। স্থাপনা সরিয়ে নিতে একাধিকবার নোটিশ দিলেও আমলে নেয়নি। উল্টো ধর্মঘট ডেকে জিম্মি করার চেষ্টা করেছে। একই এলাকায় হামিম ফিলিং স্টেশনও ১৫ শতক জায়গা দখল করেছে।
আনিকা ফিলিং স্টেশনের মালিক আব্দুল জলিল বলেন, সওজের লিজের জমিতে গাড়ি দাঁড়ায়। কোনো স্থাপনা করিনি। নোটিশ না দিয়েই তারা অভিযান চালিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বগুড়ার ৮৪ পেট্রোল পাম্পের মধ্যে অন্তত ৩৮টি সওজের জমি দখলে রেখেছে। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
গতকালের ধর্মঘটে রংপুরে ব্যাহত হয় সেচকাজ। রংপুর নগরীর পাণ্ডারদিঘি এলাকার কৃষক আকবর আলী বলেন, ‘সকালে দেকি পাম্প বন্দ। তেল (ডিজেল) না পাওয়ায় মেশিন চালু হইল না। জমি কাদো (কাদা) কইরবার না পায়া বোরো ধানের চারাও নাগবার পাইনো না।’
গতকাল মাঠ ঘুরে বেশির ভাগ সেচযন্ত্র বন্ধ পাওয়া যায়। রংপুর নগরীর হারাটি এলাকার কৃষক বোরহান উদ্দিন বলেন, শ্রমিক নিয়ে চারা উত্তোলন চলছিল। সকালে সেচের মাধ্যমে জমি তৈরি করে দুপুরে রোপণের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ডিজেল না পাওয়ায় সেচযন্ত্র চালানো সম্ভব হয়নি।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে রাজশাহী ও বগুড়া ব্যুরো এবং রংপুর অফিস)
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০% বাড়বে: আইএসপিএবি
সরকারের প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ আরও অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা।
ইন্টারনেটের দাম বাড়ার বিষয়টি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সেবাদাতারা।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এফটিএসপি) জন্য একটি গাইড লাইনের খসড়া করেছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে আইএসপিএবি।
নতুন গাইডলাইনে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের জন্য ১ শতাংশ দিতে হবে। এ ছাড়া এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বাড়বে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সরকার তার উদ্দেশ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং জনগণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সরকার ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমিনুল হাকিম বিদ্যমান নীতির সঙ্গে প্রস্তাবিত নীতির তুলনামূলক উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যমান নীতিতে সরকার এই খাত রেভিনিউ শেয়ারিং, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল এবং ভ্যাটসহ ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ পায় কিন্তু নতুন নীততে তা ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। সরকারি নীতিতে শহর ও গ্রামে বৈষম্য বাড়বে।
আমিনুল হাকিম বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা সরকার বৈষম্য উপহার দিচ্ছে। সরকার একদিকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে নিজেরা দাম বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্টারলিংকের জন্য সরকার লাইসেন্স ফি ধরেছে ১০ হাজার ডলার অর্থাৎ ১২ লাখ টাকা। কিন্তু দেশের আইএসপিদের জন্য তা ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, স্টারলিংককে এত সুবিধা দেওয়ার কারণ কি?
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি বলেছে, প্রস্তাবিত খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।