রংপুরের পীরগঞ্জে এক নারীর মাথাবিহীন লাশ এবং পরে মাথা উদ্ধারের পর এবার পাওয়া গেছে তাঁর মেয়ের লাশ। গতকাল রোববার উপজেলার বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডলের বাড়ির পেছনে গর্ত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত শুক্রবার এক নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। একদিন পর শনিবার বিকেলে পাওয়া যায় খণ্ডিত মাথা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাঁর নাম দেলোয়ারা। এর দুদিন পর তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে সাইমার লাশ উদ্ধার করল পুলিশ।
দেলোয়ারার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেড় মাস আগে দেলোয়ারার মেয়ে সাইমাকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
স্বজনরা দেলোয়ারার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে শনিবার রাতে পুলিশের উদ্যোগে রংপুর সদরের মুন্সিপাড়া সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রোববার সাইমার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা আতিকুরের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) আছিফা আফরোজা আদুরি জানিয়েছেন, নিহত দেলোয়ারার স্বামী ছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দিলালপুর গ্রামের রেজাউল করিম।
রেজাউল করিম পুলিশকে বলেছেন, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মেয়ে সাইমাও ছিল।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আতিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, দেড় মাস আগে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। লাশ লুঙ্গিতে পেঁচিয়ে বাড়ির পেছনে বাগানে গোবরের স্তূপের পাশে
৩-৪ ফুট গর্ত করে পুঁতে রাখেন তিনি। তাঁর স্বীকারোক্তির পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জায়গাটি থেকে শিশু সাইমার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনন্ত কুমার বর্মণ জানান, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে জানা গেছে, দেলোয়ারা যাত্রায় নাচের জন্য ‘ঝিনুক মালা’ নাম নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রাদলের সঙ্গে থাকতেন। ছোটবেলায় তাঁর বাবা-মা মারা যান, ভাই-বোনও ছিলেন না। মামা-মামি তাঁকে বড় করেন। ১২-১৩ বছর বয়সে পালিয়ে গিয়ে যাত্রা দলে যোগ দেন তিনি। পরে বাড়ি ফিরলেও মামা-মামি তাঁকে আর গ্রহণ করেননি।
রেজাউল করিম যাত্রা প্যান্ডেলে জুয়ার গুটিচালক (ডাবু) ছিলেন। সেখানে তাদের পরিচয়ের পর বিয়ে হয়। দেলোয়ারা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। আতিকুর রহমানও একই ধরনের কাজ করতেন। যাত্রায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেলোয়ারার। পরিচয়ের পর তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করায় রেজাউল স্ত্রীকে তালাক দেন।
এরপর থেকে আতিকুরের বাড়িতে থাকতেন দেলোয়ারা। ৪৫ দিন আগে দুষ্টুমি করায় শিশুটিকে আতিকুর আঘাত করেন। এতে সে চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরে আর চেতনা না ফেরায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে ধারণা পুলিশের।
ঘটনার সময় শিশুটির মা বাড়িতে ছিলেন না। যাত্রা থেকে ১৫-২০ দিন পর ফিরে দেলোয়ারা সন্তানের খোঁজ করলে আতিকুর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এর জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এতে আরও অনেকের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে জানান এসআই অনন্ত কুমার।
গত শুক্রবার বড় বদনাপাড়ায় এক নারী মরিচ তুলতে ক্ষেতে গিয়ে নারীর মাথাবিহীন লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেন। সিআইডির ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় ও ঠিকানা শনাক্ত করে।
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর নাম দেলোয়ারা (৩১) বলে জানা সম্ভব হয়। নীলফামারীর জলঢাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। শনিবার চতরা ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীরে পাকার মাথা টোংরারদহ এলাকা থেকে তাঁর কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডল ও তার মা আপিয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসআই অনন্ত কুমার বর্মণ বাদী হয়ে হত্যা মামলা
করেন। পুলিশের একটি দল বস্তা ও ব্যাগে থাকা ছবি, সিমকার্ড, কাগজে লিখিত কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে নিহত নারীর পরিচয় জানতে পারে।
প্রাথমিক তদন্তের এক পর্যায়ে আতিয়ারের গতিবিধিতে নজর রাখে পুলিশ। গত শনিবার সকালে বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার পথে কাবিলপুর ইউপির ঘনশ্যামপুর সড়ক থেকে তাঁকে আটক করে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে আতিকুরের মা আপিয়া বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। শিশু সাইমার লাশ গুমের তথ্য গোপন রাখায় তাঁকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে মামলায়।
আতিকুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে তদন্ত চলছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি এমএ ফারুক। তিনি বলেন, আতিকুরের মা আপিয়া বেগম সবকিছু জেনেও পুলিশকে সহায়তা করেননি। তাই হত্যার কারণও জানা যায়নি।
আতিকুর এলাকায় জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল বলেও জানান ওসি। গতকাল তাঁর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে
আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সড়ক বিভাজকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, কিশোর নিহত
রাজবাড়ীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে ধাক্কা দিয়েছে একটি মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলটির আরোহী কিশোর নিহত ও চালক আহত হয়েছেন।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে রাজবাড়ী ফয়ার সার্ভিস অফিসের সামনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার এসআই সাজ্জাদ হোসেন মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
সিলেটে পাথরবাহী ট্রাক্টরচাপায় পর্যটক নিহত, আহত ৫
মারা যাওয়া কিশোরের নাম রিয়াদ আলী শেখ (১৪)। সে সদর উপজেলার দদশি ইউনিয়নের বড়দোয়াল গ্রামের রহমত আলী শেখের ছেলে। আহত রওনক সরকারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের সব-স্টেশন কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “দ্রুত গতির মোটরসাইকেলটি আজ সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে ধাক্কা দেয়। আমরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাৎক্ষণিক আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
স্থানীয়দের বরাতে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার এসআই সাজ্জাদ হোসেন জানান, রিয়াদ ও রওনক সকালে মোটরসাইকেল যোগে রাজবাড়ী বাজারে যাচ্ছিলেন। ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের বিভাজকে ধাক্কা দেয়। ফলে তারা আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে রাজবাড়ী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক রিয়াদকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ঢাকা/রবিউল/মাসুদ