Samakal:
2025-05-01@07:41:54 GMT

মেয়ে হত্যা লুকাতে মাকেও খুন

Published: 9th, February 2025 GMT

মেয়ে হত্যা লুকাতে মাকেও খুন

রংপুরের পীরগঞ্জে এক নারীর মাথাবিহীন লাশ এবং পরে মাথা উদ্ধারের পর এবার পাওয়া গেছে তাঁর মেয়ের লাশ। গতকাল রোববার উপজেলার বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডলের বাড়ির পেছনে গর্ত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। 

এর আগে গত শুক্রবার এক নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। একদিন পর শনিবার বিকেলে পাওয়া যায় খণ্ডিত মাথা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাঁর নাম দেলোয়ারা। এর দুদিন পর তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে সাইমার লাশ উদ্ধার করল পুলিশ।
দেলোয়ারার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেড় মাস আগে দেলোয়ারার মেয়ে সাইমাকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। 

স্বজনরা দেলোয়ারার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে শনিবার রাতে পুলিশের উদ্যোগে রংপুর সদরের মুন্সিপাড়া সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়। 
রোববার সাইমার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা আতিকুরের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) আছিফা আফরোজা আদুরি জানিয়েছেন, নিহত দেলোয়ারার স্বামী ছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দিলালপুর গ্রামের রেজাউল করিম। 
রেজাউল করিম পুলিশকে বলেছেন, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মেয়ে সাইমাও ছিল। 
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আতিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, দেড় মাস আগে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। লাশ লুঙ্গিতে পেঁচিয়ে বাড়ির পেছনে বাগানে গোবরের স্তূপের পাশে 
৩-৪ ফুট গর্ত করে পুঁতে রাখেন তিনি। তাঁর স্বীকারোক্তির পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জায়গাটি থেকে শিশু সাইমার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনন্ত কুমার বর্মণ জানান, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে জানা গেছে, দেলোয়ারা যাত্রায় নাচের জন্য ‘ঝিনুক মালা’ নাম নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রাদলের সঙ্গে থাকতেন। ছোটবেলায় তাঁর বাবা-মা মারা যান, ভাই-বোনও ছিলেন না। মামা-মামি তাঁকে বড় করেন। ১২-১৩ বছর বয়সে পালিয়ে গিয়ে যাত্রা দলে যোগ দেন তিনি। পরে বাড়ি ফিরলেও মামা-মামি তাঁকে আর গ্রহণ করেননি।
রেজাউল করিম যাত্রা প্যান্ডেলে জুয়ার গুটিচালক (ডাবু) ছিলেন। সেখানে তাদের পরিচয়ের পর বিয়ে হয়। দেলোয়ারা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। আতিকুর রহমানও একই ধরনের কাজ করতেন। যাত্রায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেলোয়ারার। পরিচয়ের পর তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করায় রেজাউল স্ত্রীকে তালাক দেন।
এরপর থেকে আতিকুরের বাড়িতে থাকতেন দেলোয়ারা। ৪৫ দিন আগে দুষ্টুমি করায় শিশুটিকে আতিকুর আঘাত করেন। এতে সে চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরে আর চেতনা না ফেরায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে ধারণা পুলিশের। 

ঘটনার সময় শিশুটির মা বাড়িতে ছিলেন না। যাত্রা থেকে ১৫-২০ দিন পর ফিরে দেলোয়ারা সন্তানের খোঁজ করলে আতিকুর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এর জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এতে আরও অনেকের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে জানান এসআই অনন্ত কুমার।
গত শুক্রবার বড় বদনাপাড়ায় এক নারী মরিচ তুলতে ক্ষেতে গিয়ে নারীর মাথাবিহীন লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেন। সিআইডির ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় ও ঠিকানা শনাক্ত করে।
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর নাম দেলোয়ারা (৩১) বলে জানা সম্ভব হয়। নীলফামারীর জলঢাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। শনিবার চতরা ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীরে পাকার মাথা টোংরারদহ এলাকা থেকে তাঁর কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডল ও তার মা আপিয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসআই অনন্ত কুমার বর্মণ বাদী হয়ে হত্যা মামলা 
করেন। পুলিশের একটি দল বস্তা ও ব্যাগে থাকা ছবি, সিমকার্ড, কাগজে লিখিত কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে নিহত নারীর পরিচয় জানতে পারে।
প্রাথমিক তদন্তের এক পর্যায়ে আতিয়ারের গতিবিধিতে নজর রাখে পুলিশ। গত শনিবার সকালে বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার পথে কাবিলপুর ইউপির ঘনশ্যামপুর সড়ক থেকে তাঁকে আটক করে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে আতিকুরের মা আপিয়া বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। শিশু সাইমার লাশ গুমের তথ্য গোপন রাখায় তাঁকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে মামলায়।
আতিকুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে তদন্ত চলছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি এমএ ফারুক। তিনি বলেন, আতিকুরের মা আপিয়া বেগম সবকিছু জেনেও পুলিশকে সহায়তা করেননি। তাই হত্যার কারণও জানা যায়নি। 
আতিকুর এলাকায় জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল বলেও জানান ওসি। গতকাল তাঁর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে 
আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের ওপর হামলা করে আটক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিল জনতা, গ্রেপ্তার ৩

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা করে আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই নারীসহ তিনজনকে। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) তানভীর মেহেদী, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খোকন হোসেন ও রিংকু বড়ুয়া, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন ও মুজিবুর রহমান। তাঁদের ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন জয়নাল আবদীন (২০), রুজিনা আক্তার (৩২) ও মোসাম্মৎ রূপধন (৪৮)। তাঁরা জয়নগর গ্রামেরই বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, রাতে ওই এলাকায় মোহাম্মদ আলমগীর নামের এক মাদক কারবারিকে ধরতে তারা অভিযান চালায়। আলমগীরকে আটক করা হলে স্থানীয় প্রায় অর্ধশত বাসিন্দা জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, এ ঘটনায় আহত এসআই তানভীর মেহেদী বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তিনগরে বাসের ধাক্কায় নারীর মৃত্যু
  • এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ, ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে নালিশি
  • গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও এক নারীর মৃত্যু
  • গৌরনদী থানার ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
  • পুলিশের ওপর হামলা করে আটক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিল জনতা, গ্রেপ্তার ৩
  • শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
  • দুই দিনের রিমান্ডে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত