৪৬ বছর বয়সী তৌহিদুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে, স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া
Published: 15th, February 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের (কলা ও আইন অনুষদের) ভর্তি পরীক্ষা দিতে নওগাঁ থেকে এসেছেন ৪৬ বছর বয়সী তৌহিদুর রহমান তপু। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হয়ে আবার পরীক্ষায় বসেছেন। স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।
আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কলা ও আইন অনুষদের (‘বি’ ইউনিটের) প্রথম পালায় (সকাল ১০টা থেকে ১১টা) ভর্তি পরীক্ষা দেন তৌহিদুর রহমান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর কক্ষে তাঁর আসন পড়েছিল।
রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে দেখা যায়, তৌহিদুর রহমান নওগাঁর এনায়েতপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৪.
তবে তৌহিদুর রহমানের দাখিল ও আলিম পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে দেখা যায় তার জন্ম তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০০৫। কিন্তু বাস্তবিকতায় তার বয়স কত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তৌহিদুর রহমান জানান, তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর তীরে। তিনি নওগাঁ সরকারি কে ডি স্কুলে মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন। ১৭ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে যান। ১৯৮৯ সালে তার মানসিক রোগ ধরা পড়ে।
অসুস্থ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় আর পড়াশোনা করেননি। ২৭ বছর পর আবার পুনরায় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। সুস্থ হওয়ার পর ২০১৪-১৫ সালে আবার পড়াশোনায় শুরু করেন। ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিতে চাইলেও আবারও মাদকাসক্ত সেন্টারে তাকে প্রেরণ করা হয়। ২০১৯ সালে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি, দাখিল এবং আলিম পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন শুরু করেন।
তৌহিদুর রহমানের বলেন, ‘আমার ইংরেজি প্রস্তুতি তেমন ভালো না। তারপরও চেষ্টা করব। যদি এই বছর জগন্নাথে ভর্তির সুযোগ না হয়, আগামী বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেব, ভর্তির সুযোগ পাব ইনশা আল্লাহ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, শুনেছি একজন বয়স্ক ব্যক্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই, তবে সে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে কি না, সেটা পরবর্তী সময়ে খতিয়ে দেখা হবে।
পরীক্ষা দেওয়ার পর কথা হয় তৌহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একাই পরীক্ষা দিতে এসেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ভালো হয়নি। এখানে তিনি ভর্তির সুযোগ পাবেন না। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পর্বে ২৪ নম্বর ভালোভাবে পূরণ করতে পেরেছেন। লিখিত অংশে ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ৪৮ নম্বর পরীক্ষা সম্পর্কে তিনি জানতেন না। প্রস্তুতি না থাকায় ভালো করতে পারেননি। ইংরেজি পরীক্ষায়ও বেশ দুর্বল। ৪৮ নম্বরের লিখিত পরীক্ষাও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পর্ব হলে তিনি ভালো পরীক্ষা দিতে পারতেন।
তৌহিদুর রহমানের জানান, তাঁর বর্তমান বয়স ৪৬ কিংবা ৪৭ বছর। সুস্থভাবে বেঁচে থাকলে আগামী ১৫ বছর তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। টিউশনি করে সময় পার করেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে একমাত্র মা আছেন। বিয়ে করেছিলেন পরে তালাক হয়ে যায়, সন্তানও নেই। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশনি করান, তাদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সবাই আমাকে মানসিক রোগী বলত, কিন্তু আমি চাই এই ভুল ধারণা পরিবর্তন হোক। পড়াশোনার মধ্য দিয়ে আমি সমাজকে দেখাতে চাই, অসুস্থ হলে আমরাও অন্যদের মতো স্বপ্ন দেখতে পারি। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। সামনের বছরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। যেখানে দুইবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, সেখানেই পরীক্ষা দিবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়াই এখন একমাত্র লক্ষ্য।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ত হ দ র রহম ন ত হ দ র রহম ন র পর ক ষ য় র পর ক র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ