আদমজী ইপিজেডে সহকর্মীর মৃত্যুতে শ্রমিক বিক্ষোভ
Published: 19th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রিমা আক্তার (২৪) নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এসময় প্রতিষ্ঠানে কয়েকজন কর্মকর্তাকে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এর ফলে অনন্ত অ্যাপারেলস নামের কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার কারখানায় কাজ করার সময়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রিমা আক্তার। অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটি দেয়নি। ফলে ওই শ্রমিক কাজ করতে থাকেন। একসময় তার অবস্থা খারাপ হলে রাত ৯টার পরে তাকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর সহকর্মীর মৃত্যুর সংবাদের ক্ষোভে বুধবার সকালে প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ বন্ধ করে কারখানা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন এক পর্যায়ে । শ্রমিকরা জানান, এই মৃত্যুর বিচার না হওয়ার পর্যন্ত তারা আন্দোলন করে যাবেন।
অনন্ত অ্যাপারেলসের এডমিন ম্যানেজার নাজমুল হক জানান, আমরা মৃত শ্রমিককে ছুটি দেইনি এটা পুরোপুরি মিথ্যা। উনি অসুস্থ হওয়ার পরপরই তাকে খানপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এরপর সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে সারাক্ষণই কথা বলেছি। তারা গতকাল মরদেহ কুমিল্লায় দাফন করা হবে বলে নিয়ে গেছে। যাবতীয় খরচও আমরা দিয়েছে। এরপর আজ সকালে ফ্যাক্টরিতে মিলাদ পড়ানোর পরই হঠাৎ আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। ফলে আজকের জন্য আমরা ফ্যাক্টরি ছুটি ঘোষণা করেছি।
এ বিষয়ে আদমজী ইপিজেডের (বেপজার) জিএম মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক জানান, গতকাল মঙ্গলবার ওই নারী শ্রমিক অসুস্থ হলে তাকে খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’