হাসিনার ‘নুন খেয়ে’ পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে: গোলাম পরওয়ার
Published: 25th, February 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ‘নুন খেয়ে’ পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডকে নতুন করে এত বছর পর প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থ হলো এই বিচারপ্রক্রিয়াকে চাপা দিতে চাওয়া হচ্ছে।
‘গণহত্যার শাসনামল: ২৮ অক্টোবর ২০০৬–৫ আগস্ট ২০২৪’ শীর্ষক সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ আয়োজন করে নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি সংগঠন। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবিতে এই সমাবেশ করা হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আজকে বিভিন্ন মহল থেকে হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য, সেই খুনি মাস্টারমাইন্ডকে রাজনীতিতে অ্যাডজাস্ট করার জন্য, নিজের পদ–পদবিকে রক্ষা করার জন্য, অথবা কখনো তাঁর আমলে নুন খেয়েছেন, তাঁর গুণ গেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাঁকে আড়াল করে পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে আপনারা যেভাবে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছেন, আমরা আজকে এই সভামঞ্চ থেকে সেই কর্তৃপক্ষের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই।’
শেখ হাসিনার শাসনামলে সাড়ে সাত বছর কারাগারে ছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘হাজার হাজর বিডিআরের কাছে গল্প শুনেছি। কীভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, লাশগুলো কীভাবে কেটে জলে ভাসিয়ে দিয়েছে। তাঁরা হিন্দিতে কথা শুনেছে। বাংলাদেশি মানুষের মতো দেখা যায়নি। মুখোশ পরে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ফলে আজ আপনি বলবেন, এই হত্যাকাণ্ড কারা করেছে, এটাকে নতুন করে এত বছর পর প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থ হলো এই বিচারপ্রক্রিয়াকে আপনারা চাপা দিতে চাচ্ছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি), পিলখানা ও সেনাহত্যার বিষয়ে তদন্তের জন্য সরকার কমিশন গঠন করেছে। এর পেছনে কারা ছিল, এই কমিশনকে অবিলম্বে এই সরকারের আমলেই জাতির সামনে তথ্য দিতে হবে।
সভায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী বলেন, গত ১৬ বছর এই দেশে দেশপ্রেমী কোনো সরকার ছিল না। ভারতের তাঁবেদার এবং স্বৈরাচার মনোভাব নিয়ে কর্তৃত্ববাদী একটি শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। যেহেতু জনসমর্থন ছিল না, সে জন্য জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা বিভিন্ন সময়ে গণহত্যা চালিয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড এবং বিরোধী মত দমন করার জন্য সময়–সময় রাজনৈতিক ও দেশপ্রেমী মানুষকে গুম করা এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁদের হয়রানি করা ছিল সেই সরকারের হাতিয়ার।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের প্রধান নির্বাহী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র ব ড আর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।
শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’
এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’
এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।
অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবিইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।
গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’
এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।
গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।
আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।
ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তিইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।
জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।
ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।
*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব