রোজা শুরুর আগেই উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বগুড়ার মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে দুই দিন আগে যে শসার দাম ২০ টাকা ছিল, আজ তা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরে খুচরা পর্যায়ে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ৩০ টাকা হালির লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

একইভাবে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকার বেগুন ও করলা ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, খুচরা বাজারে যা দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচ, আলু, টমেটোসহ অন্য সবজির।

শনিবার পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রোজা শুরু হতে না হতেই ছোলা বুট, তরমুজ ও খেজুরের দামও বেড়েছে। শনিবার পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি তরমুজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।

আরও পড়ুনরংপুরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৩৮ টাকা বেশি দামে বিক্রি১২ ডিসেম্বর ২০২৪

শনিবার সকালে দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির পাইকারি মোকাম মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, শীত বিদায় নিলেও হাট এখনো সবজিতে ভরপুর। মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শসা, লেবু, গাজর, করলা, পটোল, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁচা মরিচ, আলুসহ বিভিন্ন সবজির কোনো কমতি নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার ও পাইকারদের হাঁকডাকে সরগরম হাট। কৃষকের এক হাত ঘুরে কিছু সবজি যাচ্ছে স্থানীয় খুচরা বাজারে। বেশির ভাগ সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় মোকামে যাচ্ছে।

মোকামে আসা কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, প্রতি কেজি দেশি পাকড়ি আলু ২০ টাকা, ডায়মন্ড আলু ২০, কাঁচা মরিচ ২৫, করলা ৪৫, বেগুন ৮০, টমেটো ১০, শসা ৪০ ও মাঝারি আকারের প্রতিটি লেবু ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি পাকড়ি আলু ২৫, ডায়মন্ড আলু ২২, কাঁচা মরিচ ৩০, টমেটো ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। রোজায় সবচেয়ে চাহিদা থাকা শসা এক সপ্তাহ আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৫, কাঁচা মরিচ ২০ ও প্রতিটি লেবু ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুনরোজা শুরুর আগে আবার দাম বাড়ল ০১ এপ্রিল ২০২২

মহাস্থান হাটে ১২ মণ বেগুন বিক্রি করতে এসেছিলেন বগুড়া সদর উপজেলার মোকামতলা এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও হাটে প্রতি মণ বেগুন ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আজ সেই বেগুন বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে।

মহাস্থান হাটের আড়তদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রমজান মাস শুরু হতে না হতেই শসা, বেগুন, লেবু, কাঁচা মরিচ, গোল বেগুনসহ বেশ কিছু সবজির দাম পাইকারি পর্যায়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম বেড়েছে।

পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা পর্যায়েও সবজির দাম বেড়েছে। বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এক কেজি শসা খুচরা পর্যায়ে ৬০ টাকা, লেবু প্রতিটি ১৫ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ধনেপাতার কেজিও ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। রোজাদারদের ইফতারির পদ বেগুনি তৈরিতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে।

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, রোজার এক দিন আগে প্রতি কেজি শসা ৫০, কাঁচা মরিচ ৬০, লেবু প্রতিটি ১৫ টাকা ও গোল বেগুন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর রোজার এক দিন আগে প্রতি কেজি শসা ৪০, কাঁচা মরিচ ৬০, লেবু প্রতিটি ৮ টাকা ও গোল বেগুন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

দাম বেড়েছে রোজাদারদের ইফতারির পদ ছোলা বুট ও খেজুরের। এবার প্রতি কেজি ছোলা বুট ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রতি কেজি ছোলা বুট ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া দাম বেড়েছে আমদানি করা সব ধরনের খেজুরের। শহরের সাতমাথা ফলপট্টির ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, খুচরা পর্যায়ে এবার এক কেজি মেরজুল খেজুর ১ হাজার ৪০০, মরিয়ম ১ হাজার ১৫০, দাবাস ৪২০, লুলু ৪৮০, মাশকুল ৮০০, তিউনিসিয়ার ডাল খেজুর ৬০০, আজোয়া ১ হাজার ও ইরাকি খেজুর প্রতি কেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ৬০ ট ক পর য য় সবজ র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ

রাজধানীর গাবতলী–মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে বিজিবি মার্কেটে গড়ে ওঠা দ্বীপনগর মাছের আড়ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ জমজমাট থাকে। এই তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এসব নানা জাতের দেশি-বিদেশি মাছ।

এ আড়তে গরিবের মাছখ্যাত পাঙাশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়। নদীর পাশাপাশি সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। ওমান, চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মাছ সরাসরি এখানে আসে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রথমে বিজিবি মার্কেটে মাছ বিক্রি শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালে এ বাজারে দ্বীপনগর আড়তের যাত্রা শুরু হলেও বাজার জমে ওঠে ২০১৫ সালের পর থেকে। পরে পাঁচটি হিমাগার ও একটি বরফকল নিয়ে এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য আড়তে পরিণত হয়, যেখানে ছোট–বড় প্রায় ৪০০ পাইকারি দোকান রয়েছে।

আড়তদার ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দ্বীপনগর আড়তে জ্যান্ত মাছের পাইকারদের বিনা মূল্যে পানি সরবরাহ করায় তাঁদের প্রত্যেকের প্রায় ৫০০ টাকা করে সাশ্রয় হয়। তার ওপর যাতায়াতের সুবিধা ভালো, ওজনে কেউ মাছ কম দেয় না, চুরিও হয় না এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশে বেচাকেনা করা যায়। এসব কারণে এটি এরই মধ্যে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় আড়তে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে দিন দিন পাইকার বাড়ছে এবং মোকামও আশপাশে বিস্তৃত হচ্ছে।

দ্বীপনগর আড়তের ‘অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মো. ইনসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার কেজি পাঙাশ বিক্রি হয়, যা কারওয়ান বাজারেও হয় না। সব ধরনের মাছ মিলিয়ে দৈনিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

* দ্বীপনগর আড়তে পাঙাশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়।
* নদী ও সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছও বিক্রি হয়।
* প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে ওমান, সুদান, জর্ডান, চীন ও জাপান থেকে আমদানি করা মাছ এখানে বিক্রি হয়।

আড়তদার ও পাইকারদের দাবি, এটি দেশে পাঙাশ মাছের সবচেয়ে বড় আড়ত। এখানে দিনে ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পাঙাশ মাছ আসে। এসব ট্রাকে ৩০ থেকে ৪০টি করে পাঙাশের ড্রাম থাকে। এর একেকটিতে ৪০ কেজি মাছ থাকে। গড়ে ৩৫টি ট্রাকে ৩৫টি করে ড্রাম এবং প্রতি ড্রামে ৪০ কেজি ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, এখানে দৈনিক ৪৯ হাজার কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার, উত্তরা এবং আবদুল্লাহপুর এলাকার পাইকারেরা দ্বীপনগর আড়তে মাছ কিনতে আসেন। অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মনির হোসেন বলেন, কম দামে পাওয়া যায় বলে পাইকারেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। তাঁর নিজস্ব বরফকল রয়েছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বরফের পাটা বিক্রি করেন। তাই বাইরে থেকে বরফ আনতে হয় না।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মাছ কিনতে দ্বীপনগর আড়তে চলে আসেন। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নিলামের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তাজা ও হিমায়িত মাছের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা মাছের বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। ৯টার পরপরই সব ব্যস্ততা শেষে ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়ে যায়।

সাভার নবীনগর থেকে আসা পাইকার ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এখান থেকে দৈনিক ১৫০–২০০ কেজি সাগরের মাছ নিয়ে এলাকার বাজারে বিক্রি করেন।

আড়তদারেরা জানান, দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টেকেরহাট, খুলনা, রাজশাহী, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ সব অঞ্চল থেকেই মিঠাপানি এবং নদী ও সাগরের মাছ আসে দ্বীপনগর আড়তে। ওমান, সুদান, জর্ডান, জাপান, চীন এবং ভারত থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হয়।

মেসার্স ঢাকা গাবতলী ফিশ আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক ৫ টনের মতো মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো।’ তাঁদের হিমাগারে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ মাস পর্যন্ত মাছ ঠিক থাকে। প্রয়োজনে তাপমাত্রা আরও কমানো যায় বলে জানান তিনি। তবে আড়তদারদের হিসাবে এসব হিমাগার থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।

৫৫০ টাকা করে বাইম মাছ কেনার পর আদাবর বাজারের একজন পাইকার প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই মাছ বিক্রি করবেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। পোয়া মাছ কিনেছেন ৩৩০ টাকা কেজি দরে, বেচবেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ওই পাইকার আরও জানান, আগে কারওয়ান বাজার থেকে মাছ কিনলেও এখন সুবিধা থাকায় দ্বীপনগরে আসেন। প্রতিদিন পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ থেকে ৭০ কেজি মাছ কেনেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • মেঘনার পাড়ে ‘আড়াই ঘণ্টার হাট’, দৈনিক বেচাকেনা ২৫-২৬ লাখ টাকার টাটকা মাছ
  • দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ