ভারতের প্রতিশোধ না অস্ট্রেলিয়ার দাপট
Published: 4th, March 2025 GMT
‘ভরা গ্যালারিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো সন্তুষ্টি আর কিছুতে নেই’– ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর আহমেদাবাদে কথাটি বলেছিলেন প্যাট কামিন্স। দুবাইয়ের গ্যালারিও আজ ভারতীয় সমর্থকে পরিপূর্ণ থাকবে। কামিন্সের অনুপস্থিতিতে নিশ্চিতভাবেই তাঁর সেই কথা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবেন স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলরা। তাই ভারতবাসীর মনে একটা ভয়-শঙ্কা কাজ করছেই। আহমেদাবাদের ফাইনালের মতো হৃদয় ভেঙে দেবে না তো অস্ট্রেলিয়া! এই ভয়ের উল্টো পিঠে ভারতের জন্য রয়েছে প্রতিশোধের সুবর্ণ সুযোগও। মরুর দেশে আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে কে বাজিমাত করবে?
অস্ট্রেলিয়ার জন্য গ্রুপ পর্বটা একেবারেই আদর্শ ছিল না। বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানে তাদের দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। তার পর তড়িঘড়ি করে ফ্লাইট ধরে দুবাইয়ে উড়ে আসতে হয়েছে সেমির জন্য। তার ওপর দলের সেরা তিন পেসার– কামিন্স, স্টার্ক, হ্যাজেলউডসহ নিয়মিত ছয়জন নেই। দলটির নাম অস্ট্রেলিয়া বলেই হেলাফেলা করা যায় না। আইসিসি ইভেন্টে যাদের রেকর্ড অনন্য। হলুদ জার্সি গায়ে জড়ালেই অপরিচিত জনসন-ইংলিসরা দানব হয়ে ওঠেন। যেমনটা ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে করেছিলেন ট্রাভিস হেড। দু’দলের সর্বশেষ সেই ওয়ানডে ম্যাচে ভারতের ২৪০ রান তাড়া করতে নেমে পঞ্চাশের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে ১৩৭ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলে চোখের পলকে ভারতকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাভিস হেড। এর আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতকে কাঁদিয়েছিলেন তিনি। আজও কি তিনি জ্বলে উঠবেন? নাকি অন্য কোনো নবীন হয়ে উঠবেন ট্রাভিস হেড! কিংবা অভিজ্ঞ স্টিভ স্মিথ বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝলক দেখা যাবে আজ?
দুই বছর আগের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা সবচেয়ে তরতাজা ভারত অধিনায়কের। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য প্রতিশোধ শব্দটা আনতে চাইলেন না রোহিত, ‘অস্ট্রেলিয়া কঠিন এক প্রতিপক্ষ। গত তিন ম্যাচে আমরা যে চিন্তাধারা নিয়ে মাঠে নেমেছি, যেভাবে খেলেছি; এই ম্যাচেও আমাদের একই মনোভাব থাকবে।’ এমনকি অস্ট্রেলিয়ার সেরা একাদশের ছয়জন না থাকার পরও তাদের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না রোহিত, ‘অনেক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া পরাশক্তির মর্যাদা ধরে রেখেছে। তারা কঠিন লড়াই করবে, সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আর সেমিফাইনালে তো উভয় দলের ওপরই জয়ের চাপ থাকে। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের কাজটা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সঠিকভাবে সম্পাদন করা।’ সেমির আগে ভারত একাদশ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা সমস্যায় রয়েছে। স্পিনার বরুন চক্রবর্তীকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমনিতেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ৫ উইকেট তুলে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপে ফেলে দিয়েছেন। অবশ্য বরুন ক্লিক করায় ভারতের সামনে নতুন বিকল্পও খুলে গেছে। দুবাইয়ের মন্থর পিচে সম্ভবত চার স্পিনার নিয়ে নামতে যাচ্ছে ভারত। সে ক্ষেত্রে আজও কপাল পুড়ছে পেসার হার্সিত রানার।
ভারত যে অলআউট স্পিন আক্রমণ নিয়ে নামছে, সেটা অস্ট্রেলিয়া ভালোই বুঝে গেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি পরিষ্কার করেই বলেছেন অসি অধিনায়ক স্মিথ, ‘শুধু বরুন নন, ভারতের স্কোয়াডে থাকা সব স্পিনারই ভালো। তাদের স্পিনারদের আমরা কেমন খেলব; বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে, সেটার ওপর আমাদের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। ভারতের স্পিন খেলাই আমাদের এ ম্যাচে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ দুবাইয়ের আবহাওয়া আজ শুষ্ক থাকবে। গত দুই ম্যাচের মতো আজ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে বৃষ্টির বাধা আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা