দেশের প্রচলিত আইনে কোনো কোনো ফৌজদারি অপরাধের জন্য এখনও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ করা হলেও আমাদের দেশে তা বহাল তবিয়তে আছে। যেমন ধরা যাক বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার কথা। অপরাধমূলক নরহত্যার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। বিলেতি আইনের ধারণায় বিচার সম্পন্ন করে দোষী সাব্যস্ত হলে ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান থাকায় আমরা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’-এর মতো একটি অভিধা ভাবতে পেরেছি। এই অভিধার মধ্যেই বিচার শেষে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের প্রতি সমর্থন পাওয়া যায়। ফলে কথাটি ‘বিচারের নামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা হত্যা’ হলে অধিক যুক্তিযুক্ত হতো। সাম্প্রতিক দঙ্গলের মাধ্যমে হত্যা এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রচলিত আইনে হত্যাকাণ্ডের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে, তাতে বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া সব হত্যাই অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড। হত্যার পেছনে যত যুক্তিই দেখানো হোক না কেন, তা আইনের দৃষ্টিতে ধোপে টেকে না।
বিগত সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে কোনো প্রকার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে হত্যার যে নজির সৃষ্টি হয়েছিল, তার ভয়াবহ স্মৃতি মানুষ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। গুম কমিশনের তথ্যমতে, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সাড়ে তিন হাজার মানুষ র্যাবের হাতেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৯৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো যুক্তি না থাকলেও বিগত সরকারের আমলে ফ্যাসিজম টিকিয়ে রাখার অভিপ্রায়ে এসব হত্যাকাণ্ড জায়েজ করার অপচেষ্টা ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে একই অজুহাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। অথচ গত সাত মাসে দেশে অন্তত ২২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর দ্বারা। এর বাইরে মবের হাতে নিহত হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য কাউকেই এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। মৌলিক মানবাধিকার হরণের প্রবণতা অব্যাহত থাকার ফলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
অপরাধ দমনে যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যে কার্যক্রম চলমান, সেখানেও ব্যাপক মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কুমিল্লার তৌহিদুল ইসলাম বাবার কুলখানি উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে এসে যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ ছিল। বিবিসির ৯ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাত আড়াইটার দিকে সেনাসদস্যরা বাড়িতে ঢোকেন। সঙ্গে সিভিল পোশাকেও লোকজন ছিলেন। তৌহিদুলের কাছে অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো অস্ত্র থাকার কথা অস্বীকার করেন। অস্ত্র না পেয়ে পরে তৌহিদুলকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। তৌহিদুল ইসলামের বাড়িতে প্রবেশ, তল্লাশি, জব্দ, গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে যৌথ বাহিনী দেশের প্রচলিত কোনো আইনই মানেনি। সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ কারও গৃহে প্রবেশ, তল্লাশি ও আটকের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় যথা– রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপের বিধানসাপেক্ষে অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে তৌহিদুলের বাড়িতে প্রবেশের আগে এই চারটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল বলে দাবি করা হয়নি। তৌহিদুলকে আটকের পরে যেভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, তাতে সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে এবং নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর অধীনে এটি একটি আমলযোগ্য অপরাধ। সন্দেহের বশে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার সংশোধন করে হাইকোর্ট বিভাগ ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় ২০০৩ সালে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, যা পরে আপিল বিভাগ সংশোধিত আকারে বহাল রাখেন। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের যে কোনো বিভাগের রায় আইন হিসেবে গণ্য হবে। উল্লিখিত ঘটনায় সেই আইনেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয়েছে।
কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ কবির নাহিদ নামে এক যুবক নিহত হন। ঘটনার সাত দিন পর নাহিদের বাবা মো.
কোনো বাহিনী যখন আইন দ্বারা নির্ধারিত কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করবে তখন সেই বাহিনী আইনের মধ্যে থেকেই তা পরিচালনা করতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের আইন না মানার প্রবণতা শুধু সাধারণ নাগরিকের মধ্যে নয়, সেটি বিভিন্ন বাহিনীরও মজ্জাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থার গুণগত পরিবর্তন দরকার, নয়তো নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার হরণের যে প্রবণতা, তা থেকে বের হওয়া যাবে না।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি জোর দিয়ে বলা দরকার তা হলো, এটি মূলত প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাকে পাস কাটিয়ে একটি সমান্তরাল, অন্যায্য, অশুভ বিচারিক ব্যবস্থা চালুর অপচেষ্টা, যা বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার প্রতিই প্রচণ্ড হুমকিস্বরূপ। বিচার বিভাগের নিজেদের স্বার্থেই এই অন্যায্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু বিগত সরকারের আমলে নীরবতার মাধ্যমে উল্টো এই অন্যায্য ব্যবস্থা বজায় থাকার পেছনে শক্তি জুগিয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর পাশাপাশি উত্তেজিত জনতার নামে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, আগস্ট থেকে ডিসেম্বর– এই চার মাসেই গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। সারাদেশে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের একটি বড় অংশ হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য কাজে ফেরেননি এবং যারা কাজে যোগদান করেছেন তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের প্রতি হামলার ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। সেসবের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চোখে পড়ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাদের ভঙ্গুর মানসিক অবস্থায় উদ্যমী হয়ে অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশে উদ্বেগজনক হারে বিচারবহির্ভূত হত্যা বাড়ছে, যা পুরো দেশের জন্য অশনিসংকেত। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার শত ত্রুটি সত্ত্বেও বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা হিসেবে উত্তেজিত জনতার নাম করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা জায়েজ হতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তা বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে হলে প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আইন সবার জন্য সমান– এটি যে শুধু কথার কথা নয়, তা প্রমাণের দায় রাষ্ট্রের। v
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ র ব যবস থ র গণপ ট ন প রচল ত র জন য ব গত স আইন র সদস য অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’