রাজশাহীতে অটোরিকশায় নারী শিক্ষার্থীকে দেখে অশালীন কর্মকাণ্ড, আটক ১
Published: 12th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে তাঁকে নওগাঁর মান্দা থেকে আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
আটক ব্যক্তির নাম মাসুদ রানা। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের কেশবপুর এলাকায়। তিনি কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ফেসবুক আইডিতে ওই ব্যক্তির একটি ছবি ও ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে ঘটনার বর্ণনা দেন। তখন ফেসবুকে অনেকেই তাঁকে আটক করার দাবি জানান। গতকাল রাতে স্থানীয় ছাত্র-জনতা মাসুদ রানার বাড়িতে ভাঙচুর চালান।
এ সম্পর্কে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ওই ব্যক্তিকে নওগাঁ থেকে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশ আটক করেছে। ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে ঘটনাটি জানানোর পর থেকেই পুলিশ দায়িত্ব মনে করে অভিযানে নামে। আজ এই ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ (গতকাল) পরীক্ষা দিয়ে ইফতারি কিনে বাসায় আসার সময় বর্ণালীর মোড়ে এই জানোয়ারের বাচ্চা আমার সামনে বসে। হাতে কাপড়ের বড় বস্তা ছিল। বারবার আমার পায়ে টাচ হচ্ছিল। ভাবলাম এত বড় ব্যাগ, তাই হয়তো সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরও বেশি সমস্যা হওয়ার পর পা সরাতে বলি। তারপর সে নিজের গোপনাঙ্গ নিয়ে অশোভন আচরণ করে। যখন বুঝতে পারে ভিডিও করতেছি, তখনই হাত সরায় নেয়।’
এ ব্যাপারে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে গতকাল রাতে তিনি ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যাঁরা এই অবধি আমার খোঁজখবর নিয়েছেন, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সেইফলি বাসায় আসছি। যাঁরা জিজ্ঞাসা করতেছেন আমি কিছু করতে পেরেছি কি না, তাঁদের জন্য বলি “না”, আমি তেমন কিছু করতে পারিনি! যাঁরা আমাকে চিনেন, তাঁরা জানেন, আমি ভিতু অনেক। অল্পতে ভয় পাই। ওই ঘটনা ঘটার পর আমার হাত–পা কাঁপছিল। গা ঘিন ঘিন করছিল। দুটি গালি দেওয়া ছাড়া কিছু করতে পারিনি। এই যে সঠিক জায়গায় সঠিক প্রতিবাদ না করতে পারার কষ্ট আমি আজীবন ধরে পেয়ে আসছি। ওই লোকের খোঁজ পাওয়া গেছে। যত দ্রুত সম্ভব আইনি পদক্ষেপ নিব!’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই শ ক ষ র থ ফ সব ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট
এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:
হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।
প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।
কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?
Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?
হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।
বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?
জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।
তাহলে বাবা-মা কী করবেন?
শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।
একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।
তারা//