বরগুনায় আট বছর বয়সী এক পথশিশুকে ধর্ষণচেষ্টার পর হাসপাতালে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সাত দিন পর গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটিকে উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

ভুক্তভোগী শিশুটি বরগুনা সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবা ভিক্ষা করেন, মা মানসিক প্রতিবন্ধী। মায়ের সঙ্গে শিশুটি জেলার জনবহুল এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকত। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মোসলেম মিয়া (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার হেউলিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। পেশায় একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে পৌর শহরের নয়াকাটা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ, ভুক্তভোগী পথশিশু ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুটি বরগুনা সদর হাসপাতাল এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকত। অন্যদিকে অভিযুক্ত মোসলেম হাসপাতালের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। ৭ মার্চ তিনি শিশুটিকে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এতে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে লুকিয়ে রাখা হয়। তাকে নির্যাতনের বর্ণনার একটি ভিডিও প্রথম আলোর হাতে এসেছে।

ভিডিওর সূত্র ধরে ওই হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটিকে হাসপাতালে অফিশিয়ালি ভর্তি করা হয়নি। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে তার কোনো তথ্য নেই। পরে হাসপাতালের খোঁজ করে পঞ্চম তলার একটি ওয়ার্ডে শিশুটির সন্ধান মেলে। এরপর বিষয়টি পুলিশকে জানালে শুক্রবার রাত দুইটার দিকে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। একই সময়ে সন্দেহজনক তিনজনকে আটক করে থানায় আনে পুলিশ। পরে ভুক্তভোগী শিশু অভিযুক্ত মোসলেমকে শনাক্ত করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেমও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.

আবদুল হালিম বলেন, খবর পেয়ে সারা রাত অভিযান চালিয়ে তাঁরা শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পরে শিশুটির দেওয়া নির্যাতনকারীর দৈহিক বর্ণনা অনুযায়ী তিনজনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজনকে শিশুটিকে শনাক্ত করে। তাঁকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের কোনো কর্মচারী জড়িত কি না, সেটা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরগ ন র একট

এছাড়াও পড়ুন:

আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী

রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।

৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগে

তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।

পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী