সিরাজুল মোস্তফা, বাবুল মিয়া ও শামশুল আলম—তাঁরা তিন বন্ধু। তিনজনই পৃথকভাবে মাছের ব্যবসা করছিলেন। তবে ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছিল না। নতুন একটা কিছু করার কথা ভাবলেন তিনজন। শেষে সিদ্ধান্ত নেন, গরম এবং রোজার মাস সামনে রেখে তরমুজ চাষ করবেন। তবে চাষের জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। যেসব জমি খালি পড়ে ছিল তাতে শুধু লবণ চাষ হয়। অবশেষে এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে সেই লবণাক্ত জমির চার কানি (প্রতি কানিতে ৪০ শতক) বর্গা নিয়ে শুরু করেন তরমুজের চাষ। এখন সেই খেত থেকেই অন্তত আট লাখ টাকা লাভের আশা তিন বন্ধুর।

তিনজনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে। তাঁদের তরমুজ চাষ করতে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার মতো। এরই মধ্যে খেত থেকে আট লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন তাঁরা। খেতে রয়েছে আরও প্রায় দুই লাখ টাকার তরমুজ।

কাঁটাখালী গ্রামটির পূর্ব পাশে নাফ নদী, এরপর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। নাফ নদীর পাড়ের কয়েক শ একর জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে লবণ চাষ হয়ে আসছে। লবণ মৌসুম শেষ হলে এসব জমি খালি পড়ে থাকত। কারণ, লবণমাঠে ধানসহ ফসলের চাষ তেমন হয় না।

তিন উদ্যোক্তার একজন সিরাজুল মোস্তফা বলেন, লবণমাঠে তরমুজ চাষের বিষয়ে তিন বন্ধু কৃষি বিভাগের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেন। তারপর বাড়ির পাশের চার কানি লবণমাঠে তরমুজ চাষ শুরু করেন। মাঠে রোপণ করা হয় প্রায় ১২ হাজার চারা। প্রায় প্রতিটি গাছেই তরমুজ ধরেছে। তরমুজের আকারও বড়। প্রতিটির ওজন ৮ থেকে ১২ কেজি। ফাল্গুন মাসের শুরুতে গরম অনুভূত হওয়ায় তরমুজের চাহিদা বেড়ে যায়। রোজার মাসে চাহিদা আরও বেড়েছে। এখন প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। টেকনাফ, হ্নীলা, হোয়াইক্যং বাজারেই খেতের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। কিছু তরমুজ কক্সবাজার শহরের দোকানগুলোয় সরবরাহ করা হয়।

লবণের মাঠে ফলেছে তরমুজ। কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং কাটাখালী গ্রামে তরমুজ চাষ করে সফল তিন বন্ধু.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তরম জ চ ষ ত ন বন ধ র তরম জ

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।

এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”

তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”

এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।

অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ