ফেলে রাখা লবণমাঠে তরমুজ চাষ, যেভাবে সফল তিন বন্ধু
Published: 20th, March 2025 GMT
সিরাজুল মোস্তফা, বাবুল মিয়া ও শামশুল আলম—তাঁরা তিন বন্ধু। তিনজনই পৃথকভাবে মাছের ব্যবসা করছিলেন। তবে ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছিল না। নতুন একটা কিছু করার কথা ভাবলেন তিনজন। শেষে সিদ্ধান্ত নেন, গরম এবং রোজার মাস সামনে রেখে তরমুজ চাষ করবেন। তবে চাষের জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। যেসব জমি খালি পড়ে ছিল তাতে শুধু লবণ চাষ হয়। অবশেষে এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে সেই লবণাক্ত জমির চার কানি (প্রতি কানিতে ৪০ শতক) বর্গা নিয়ে শুরু করেন তরমুজের চাষ। এখন সেই খেত থেকেই অন্তত আট লাখ টাকা লাভের আশা তিন বন্ধুর।
তিনজনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে। তাঁদের তরমুজ চাষ করতে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার মতো। এরই মধ্যে খেত থেকে আট লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন তাঁরা। খেতে রয়েছে আরও প্রায় দুই লাখ টাকার তরমুজ।
কাঁটাখালী গ্রামটির পূর্ব পাশে নাফ নদী, এরপর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। নাফ নদীর পাড়ের কয়েক শ একর জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে লবণ চাষ হয়ে আসছে। লবণ মৌসুম শেষ হলে এসব জমি খালি পড়ে থাকত। কারণ, লবণমাঠে ধানসহ ফসলের চাষ তেমন হয় না।
তিন উদ্যোক্তার একজন সিরাজুল মোস্তফা বলেন, লবণমাঠে তরমুজ চাষের বিষয়ে তিন বন্ধু কৃষি বিভাগের এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেন। তারপর বাড়ির পাশের চার কানি লবণমাঠে তরমুজ চাষ শুরু করেন। মাঠে রোপণ করা হয় প্রায় ১২ হাজার চারা। প্রায় প্রতিটি গাছেই তরমুজ ধরেছে। তরমুজের আকারও বড়। প্রতিটির ওজন ৮ থেকে ১২ কেজি। ফাল্গুন মাসের শুরুতে গরম অনুভূত হওয়ায় তরমুজের চাহিদা বেড়ে যায়। রোজার মাসে চাহিদা আরও বেড়েছে। এখন প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। টেকনাফ, হ্নীলা, হোয়াইক্যং বাজারেই খেতের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। কিছু তরমুজ কক্সবাজার শহরের দোকানগুলোয় সরবরাহ করা হয়।
লবণের মাঠে ফলেছে তরমুজ। কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং কাটাখালী গ্রামে তরমুজ চাষ করে সফল তিন বন্ধু.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তরম জ চ ষ ত ন বন ধ র তরম জ
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।