গণ-অভ্যুত্থান কারও একার চেষ্টায় নয়, দেশের জনগণই সফল করেছে: জোনায়েদ সাকি
Published: 20th, March 2025 GMT
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। এটি কারও একক দাবি নয়। গণ–অভ্যুত্থানও কারও একার চেষ্টায় হয়নি। অভ্যুত্থান এ দেশের জনগণ করেছেন। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর অত্যাচার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে। সব রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ও ব্যক্তিবর্গ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলে ইফতার উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এমনকি স্পষ্ট ঘোষণাও ছিল যে এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এতে তার নাগরিকদের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার থাকবে।’
বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণপর্বে প্রবেশ করার জন্য জাতীয় ঐকমত্যে আসতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই রাজনৈতিক উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকার এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক কোনো পক্ষের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব তৈরি না হয়। আপনারা পক্ষপাতিত্ব করলে এই দেশ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ধর্মচর্চার মধ্যে নানা মতবিরোধ তৈরি হতে পারে। সে মতবিরোধ কীভাবে মীমাংসা হচ্ছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে বিশ্বাসই থাকুক না কেন, পরিচয় যা-ই হোক না কেন; একজন নাগরিকের নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক কেবল নাগরিকতা দিয়ে। তার কোনো পরিচয় নাগরিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা মুসলমানের মধ্যেও ভিন্ন বিশ্বাসের কারণে কেউ কারও গায়ের জোরের শিকারে পরিণত হবেন না।
মাজারে হামলার প্রসঙ্গ টেনে জোনায়েদ সাকি বলেন, তৌহিদি জনতার নামে মাজারে হামলা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ চিত্রিত হচ্ছে জঙ্গি হিসেবে। বাংলাদেশকে জঙ্গি হিসেবে দেখাতে চায় ভারতের মিডিয়ার একাংশ, এমনকি ভারতের শাসক দলও। এর ফলে তৌহিদি জনতার নামে আক্রমণটা ভারতীয় মিডিয়াকে সাহায্য করছে। এসব যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াতেও প্রচারিত হচ্ছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই রাষ্ট্র গঠনকাল থেকেই এমন এক ক্ষমতাকাঠামো বানিয়েছে, যেখানে এক ব্যক্তির হাতেই সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা, সেটি পৃথিবীর কোনো দেশের সরকারপ্রধানের নেই। সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে, সংবিধানের ঊর্ধ্বে। এই স্বৈরাচারী ক্ষমতাকাঠামোটাই বাংলাদেশকে বারবার ফ্যাসিবাদী শাসনের খপ্পরে ফেলছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা এটিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, তার চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে।
শুধু সরকার পরিবর্তন জনগণের মুক্তি আনে না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি না হলে পরিবর্তন আসবে না। এ জন্যই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা তোলা হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে ক্ষমতাকাঠামোর বদল। স্বৈরাচারী কাঠামোর পরিবর্তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করাই হলো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কখনো জনগণকে ছাপিয়ে যেতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধি বা সরকার সব সময় জনগণের অধীন থাকবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ২৮ জুলাই যে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে কেবল সরকার বদলের কথা হয়নি। সরকার পতনের পাশাপাশি শাসনব্যবস্থা বদলের কথাও বলা হয়েছিল। যুগপৎ আন্দোলনে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব সামনে এসেছিল। যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সারা দেশে জমিনটা তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো করে লড়েছে। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই, সরকারের পতন, শাসনব্যবস্থার বদল ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এটি কারও একক দাবি নয়। অভ্যুত্থানও কারও একক নয়। অভ্যুত্থান এ দেশের জনগণ করেছেন। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর অত্যাচার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে। সব রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ও ব্যক্তিবর্গ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান করেছেন।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার ও একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার জন্য জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এ জন্য জবাবদিহি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী। সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী ফাহিম শরীফ খান। বক্তব্য দেন বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। ইফতার ও আলোচনা শেষে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ জনগণ র কর ছ ন ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ বলছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, বাকি শুধু ইসলামি শাসন দেখার: গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা বিগত ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। সেখানে জনগণের কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ সাধিত হয়নি। বিগত সরকারগুলো হত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের মাধ্যমে দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, শুধু বাকি রয়েছে ইসলামি শাসন দেখার। তাই তো আমিরে জামায়াত শফিকুর রহমান একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক দিয়েছেন। একটি জনমুখী ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। যেখানে লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হবে না, বেকারত্বের অভিশাপ কোনো যুবককে বয়ে বেড়াতে হবে না, সকল বৈষম্য দূর হবে। মানুষ সত্যিকার একটি কল্যাণরাষ্ট্র দেখতে পাবে।’
আজ রোববার সকালে পবিত্র হজ পালন শেষে মিয়া গোলাম পরওয়ার নিজ বাড়িতে আসার পথে খুলনার সিকিরহাট, ফুলতলা বাজার ও শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে স্থানীয় জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কথা অনুযায়ী হয়তো আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সকাল ১০টায় ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিকিরহাট খেয়াঘাট চত্বরে, সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে ফুলতলা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ও খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক পথসভা হয়। এসব পথসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা অফিস সেক্রেটারি আশরাফুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির প্রমুখ।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মনে করেন, কল্যাণকর ও জনমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে সৎ মানুষের প্রয়োজন। জামায়াত নির্বাচিত হলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কী কী করা হবে, বক্তব্যে সেসব তিনি তুলে ধরেন।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য ছিলেন গোলাম পরওয়ার। বক্তব্যে নিজের সংসদীয় এলাকায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনাও তুলে ধরেন তিনি।