আওয়ামী লীগ নিজে রাজনীতিতে ফেরার পদক্ষেপ নেয়নি, আমরা ঝগড়া করছি: মান্না
Published: 22nd, March 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে ভোটে আনা নিয়ে চলমান সাম্প্রতিক আলোচনা প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘রাজনীতিতে আবার ফেরার জন্য আওয়ামী লীগ নিজে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা কেউ কেউ, যাঁরা খুব গুরুত্বপূর্ণ লোকজন, ঝগড়া করে ফোকাস করে তাদের সবার সামনে নিয়ে আসছি।’
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন।
মান্না বলেন, ‘(দেশে) গণতান্ত্রিক পথ থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে তাদের (আওয়ামী লীগের) বিচার হতে হবে।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করছি না। এটা রাজনৈতিক প্রস্তাব। তবে সরকার ও সরকারপ্রধান জনগণকে আহ্বান জানাবেন, সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাড়ে সাত মাসে সাড়ে সাত সেন্টিমিটারও অগ্রগতি করতে পারেনি। নতুন কোনো রাজনৈতিক বয়ান দিতে পারেনি, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে ও মানুষের সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) পাবে এমন কোনো বক্তব্য দিতে পারেনি। এই রকম পরিস্থিতিতে রাজনীতি করে জনগণের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবে, সে সম্ভাবনা দেখি না।’
নাগরিক ঐক্যের এই নেতা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ব্যান (নিষিদ্ধ) করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে সমঝোতার প্রস্তাব নাকি দেওয়া হয়েছে এবং ছাত্ররা বলছে, এ রকম সমঝোতা কারও কারও সঙ্গে নাকি হয়েছে। এ জন্য কোনো কোনো দল কথা বলেনি এবং এখনো বলছে না। সমঝোতা করেই যদি নির্বাচন হয়, তবে এগুলো করার দরকার কী। সংস্কার তো কোনো কাজই করবে না। যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এত বছর লড়াই করে গণতন্ত্রের পথ এসেছে।’ সরকারকে এ ব্যাপারে সন্তোষজনক ব্যবস্থা নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর সংস্কার বলতে নাগরিক ঐক্য চেয়েছে এমন সংস্কার, যাতে দেশে আর কোনো স্বৈরশাসক জন্ম না নেয়, মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়, জনগণ তাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থী ও দলকে ভোট দিতে পারে সে রকম রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি; সেই সঙ্গে স্বৈরাচার শাসকচক্র ও লুটেরাদের যেন বিচারের সামনে দাঁড় করানো যায়। কিন্তু সংস্কার কমিশন এসব থেকে বেশ দূর দিয়ে হাঁটছে বলে মনে করে নাগরিক ঐক্য।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর কাদের। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এখন সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, সেদিকে পূর্ণ মনোযোগ না দিয়ে সংস্কারের নামে কিছু অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক প্রস্তাবের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে চারটি প্রদেশে দেশকে ভাগ করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ও সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টি, ৫০৫ আসনের আইনসভা ইত্যাদি প্রস্তাবনা নিয়ে অহেতুক সময় এবং সম্পদের অপব্যবহার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নাগরিক ঐক্য ধরে নিচ্ছে, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ যে ধরনের সংস্কার করবে, তার একধরনের সিদ্ধান্ত তারা আগেই নিয়ে রেখেছে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জানতে চাচ্ছে, তাদের সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দলগুলো একমত কি না। যারা একমত, তারা কিসে কিসে একমত ও যারা একমত নয়, তারা কোথায় কোথায় একমত নয়।
নাগরিক ঐক্য ১০৪টি প্রশ্নে একমত, ৫১টি প্রশ্নে একমত নয় ও ১১টি প্রশ্নে আংশিক একমত হয়েছে।
কমিশনের প্রশ্ন তৈরিতে অমনোযোগিতার ছাপ রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর সংস্কার বলতে নাগরিক ঐক্য চেয়েছে এমন সংস্কার, যাতে দেশে আর কোনো স্বৈরশাসক জন্ম না নেয়, মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়, জনগণ তাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থী ও দলকে ভোট দিতে পারে সে রকম রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি; সেই সঙ্গে স্বৈরাচার শাসকচক্র ও লুটেরাদের যেন বিচারের সামনে দাঁড় করানো যায়। কিন্তু সংস্কার কমিশন এসব থেকে বেশ দূর দিয়ে হাঁটছে বলে মনে করে নাগরিক ঐক্য।
নাগরিক ঐক্য আরও বলেছে, নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে পক্ষপাতের গুঞ্জন আছে। এ পক্ষপাত দেশের জন্য কতটা মঙ্গল বয়ে আনবে তা বলা মুশকিল, তবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ যে ঘটাবে না, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক প রস ত ব র জন ত ক র স মন আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় নির্বাচনে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসায় সমসাময়িক ইস্যুতে কথা বলার সময় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
আরো পড়ুন:
বাগেরহাটে হরতাল প্রত্যাহার, নির্বাচন অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা
নড়াইলে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে বা কিছু আসন বেশি পাওয়ার লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ যদি পিআর চায় সেটা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনবে।”
তিনি আরো বলেন, “উচ্চ-নিম্ন সবক্ষেত্রেই আমরা পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে। তারা ইশতেহার নিয়ে জনগণের কাছে যাক, ম্যান্ডেট নিয়ে তারা তাদের ভাবনা বাস্তবায়ন করুক।”
জামায়াতসহ কয়েকটি দলের আন্দোলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন,“যারা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের দাবি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি আলোচনাধীন। এমন সময় আন্দোলন করা কতটা উচিত, সেটা জনগণ দেখবে।”
স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “নির্বাহী আদেশে নয়, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সমাধান হোক।”
নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পরিণাম ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর চর্চায় রূপ নিবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে গেলে স্বৈরাচারের সঙ্গে যুক্ত ২৮টি দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন কাদের নিয়ে হবে? এটার উদ্দেশ্য এমন হতে পারে যে, নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধা নিতে আন্দোলনকারীরা আরো দলের নিষিদ্ধের দাবি জানাতে পারে। এতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে। এ সূত্র ধরে পতিত শক্তি সুযোগ নেবে।”
স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে না পারলে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ