রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কে ভিকারুননিসা স্কুলের গলিতে ছয়তলা একটি ভবনে গতকাল বুধবার ভোরে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। র‍্যাব পরিচয়ে একদল ব্যক্তি নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে ও বেঁধে রেখে ভবনের গয়নার দোকান ও কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রায় সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেছে। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপরও হামলা চালান।

ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন, ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬)। পরে আজ বৃহস্পতিবার আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯) নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় । তবে কয়েকজন পুলিশকে মারধর করে পালিয়ে গেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তিনজন শিক্ষার্থী বলে পুলিশ জানিয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

পুলিশ ডাকাতিতে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মুঠোফোন, একটি লোহার ছেনি, একটি পুরোনো লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ জব্দ করেছে।

আজ মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো.

মাসুদ আলম বলেন, ছয়তলা বাড়িটি এম এ হান্নান আজাদ নামে এক ব্যক্তির। বাড়িটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তাঁর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই বাড়িতে ‘অলংকার নিকেতন’ জুয়েলার্স নামে তাঁর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস রয়েছে। গতকাল ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে ডাকাত দল ওই বাড়ির সামনে আসে। তাঁরা প্রধান ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের র‌্যাবের লোক পরিচয় দেন। তাঁদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে বলে জানান।

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, অভিযান চালানোর কথা বলে নিরাপত্তাকর্মীদের বাড়ির প্রধান ফটক খুলে দিতে বলা হয়। তাঁদের কয়েকজনের গায়ে র‌্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ছিল। এ সময় কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী তাঁদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তখন ডাকাতরা নিরাপত্তাকর্মীদের গালিগালাজ করেন। বাড়ির ফটক না খুললে হত্যার হুমকি দেন। তাঁদের মধ্যে থেকে কয়েকজন জোর করে ফটক খুলে ফেলেন। এরপর তাঁরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মী, বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন।নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে সেখানের পিয়নকে মারধর করেন এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর ডাকাতরা তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলেন। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতরা তখন তাঁদের আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা জোর করে অফিস সহকারীদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকেন এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ সময় ডাকাতদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। এরপর তাঁরা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে কানের দুল ও চেইনসহ আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ দেড় লাখ টাকা নেন। তাঁরা এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করেন।

মাসুদ আলম বলেন, খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানার একটি টহল দল ওই বাড়িতে যান। এম এ হান্নানকে পুলিশ উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতরা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ডাকাত দলের সদস্য ফরহাদ বীন মোশারফ , ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ ও ওয়াকিল মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ও পালিয়ে যাওয়া আটজন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আজ ভোরে হাজারীবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় আবদুল্লাহ ও সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম এ হ ন ন ন র অফ স র ধ নমন ড এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার

সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।

কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।

নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।

জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’

কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘দূরে থেকেও আমরা কাছে, এটাই বাস্তব’
  • বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার