জবির লংমার্চে পুলিশের বাধা, স্মারকলিপি দেবে প্রতিনিধিদল
Published: 10th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে আয়োজিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে তাঁতীবাজার মোড় থেকে তারা লংমার্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ক্যাম্পাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দূতাবাসের উদ্দেশ্যে এ পদযাত্রা শুরু করেন তারা।
তবে আজ থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে অনুরোধ করে। পুলিশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিক্ষোভকারীরা তাঁতীবাজার মোড় থেকে রায়সাহেব বাজার দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
এ সময় ‘ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইসরাইলের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ইসরাইলি আগ্রাসন, বন্ধ করো করতে হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা। এ ছাড়াও তাদের হাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন দূতাবাস ও সৌদি আরবের দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান করবে প্রতিনিধিদল। স্মারকলিপিগুলো বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় লেখা হয়েছে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা মুসলিম জাতি, খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরি। কিন্তু আমরা তা ভুলে গেছি। আজ আমরা শুধু ফতোয়াবাজিতে ব্যস্ত। এরই সুযোগে ইহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলিম ভাই-বোনদের হত্যা করছে। আমি মুসলিম যুবকদের জাগরণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.
এর আগে গত সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সংহতি সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
তিন দফার মধ্যে রয়েছে—গাজায় বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো, মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে লংমার্চ ও স্মারকলিপি দেওয়া এবং দেশে ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধ করা।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বলছে ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েলভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় দুটি মানবাধিকার সংস্থা—বতসেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থা দুটি বলেছে, ইসরায়েলকে থামানো দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব।
আজ সোমবার মানবাধিকার সংস্থা দুটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় বেসামরিক লোকজনের পরিচয় ফিলিস্তিনি হওয়ার কারণেই কেবল প্রায় দুই বছর ধরে তাঁদের নিশানা করছে ইসরায়েল। এর ফলে ফিলিস্তিনি সমাজে মারাত্মক—কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সংস্থা একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে। এবার ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি মানবাধিকার সংস্থা এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর দেশটির ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলের অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা; গণহারে বাস্তুচ্যুত করা এবং মানুষকে অনাহারে রাখা। এ ছাড়া ইসরায়েলের হামলায় ঘরবাড়িসহ বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের ফলে ফিলিস্তিনিরা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বতসেলেমের পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা স্পষ্ট—একটি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।’ জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবাইকে নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে—গণহত্যার মুখে আপনি কী করবেন?’
ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস তাদের প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর ইসরায়েলের হামলা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। অনেক হামলার তথ্য বিস্তারিত আকারে সংগ্রহ করে নথিবদ্ধ করেছে সংস্থাটির নিজস্ব দল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর আগে গাজায় নিয়মিত কার্যক্রম চালাত সংস্থাটি।
ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক গায় শালেভ বলেন, গণহত্যাবিষয়ক কনভেনশনের ২(সি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধু স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চালানো ধ্বংসযজ্ঞই এই ‘যুদ্ধকে’ গণহত্যায় পরিণত করেছে। কোনো কিছুকে গণহত্যা বলার জন্য সনদের পাঁচটি অনুচ্ছেদের—সবকটি পূরণ করার প্রয়োজন নেই।
নিজেদের প্রতিবেদনে দুটি মানবাধিকার সংস্থাই বলেছে, ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটির গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। গাজায় মানুষের দুর্ভোগের জন্য তারাও যৌথভাবে দায়ী। ইউলি নোভাক বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা ছাড়া এটি (গণহত্যা) সম্ভব হতো না। কোনো নেতাই এটি থামানোর জন্য নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’
আরও পড়ুনদ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘে সম্মেলন শুরু আজ১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো এত দিন পর্যন্ত যা করেছে, তার চেয়ে এখন তাদের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আইনি দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন গায় শালেভ। তিনি বলেন, ‘নিজেদের হাতে থাকা সব কৌশল কাজে লাগাতে হবে। নিজেদের চিন্তাভাবনা থেকে আমরা এই কথা বলছি না। এই আহ্বান গণহত্যা কনভেনশনেই জানানো হয়েছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। দেশটি থেকে প্রায় আড়াই শ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তারপরও উপত্যকাটিতে গণহত্যা চালানোর কথা স্বীকার করেনি ইসরায়েল সরকার।
আরও পড়ুনগাজায় অপুষ্টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে, সতর্ক করল ডব্লিউএইচও১৩ ঘণ্টা আগে