গাজীপুরে সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া একটি লেমুর উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১
Published: 19th, April 2025 GMT
গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া তিনটি লেমুরের মধ্যে একটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে লেমুরটি উদ্ধার করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো.
বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক আজ শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় জামালপুরে অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে ঢাকার শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে একটি পুরুষ লেমুর উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, প্রাণীটি উদ্ধার করে সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে। অন্য প্রাণীগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, লেমুর চুরির ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা হয়। এরপর বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রাণী উদ্ধারে কাজ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে সঙ্গে নিয়ে জামালপুরের সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের দড়িহামিপুর আকন্দ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার শ্যামবাজার মসজিদ-সংলগ্ন এলাকায় একটি নির্জন স্থান থেকে খাঁচায় বন্দী অবস্থায় একটি লেমুর উদ্ধার করা হয়।
গত ২৪ মার্চ সকালে লেমুরের খাঁচা খালি দেখতে পান সাফারি পার্কের কর্মীরা। সেখানে তিনটি লেমুর ছিল। পরে লেমুরের খাঁচার পেছনের দিকে লোহার জালের প্রায় তিন বর্গফুট কাটা দেখা যায়। পার্ক কর্তৃপক্ষের ধারণা, ২৩ মার্চ রাতের যেকোনো সময় লোহার জাল কেটে প্রাণী তিনটিকে চুরি করা হয়। এ ঘটনায় ২৪ মার্চ শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দেয় পার্ক কর্তৃপক্ষ। পরে ৭ এপ্রিল এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এরপর ৯ এপ্রিল পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর বন য প র ণ ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’