বিএনপি নেতা খুনের ঘটনায় রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ
Published: 24th, April 2025 GMT
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপির সক্রিয় কর্মী লাভলু মিয়া হত্যার ঘটনায় উত্তাল রংপুরের বদরগঞ্জ। জড়িতদের শাস্তি চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। অনেকে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বুধবার দুপুরে পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
পরে বিক্ষোভকারীরা মামলার অন্যতম আসামি স্থানীয় কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক ওরফে মানিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবিতে বদরগঞ্জ ইউএনও কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা (সদ্য বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ আলী সরকার, হুমায়ুন কবির মানিক, আশরাফুল ইসলাম সংগ্রাম, সুমন সর্দার, বিএনপি নেতা আবুজার গাফ্ফারী মন্টু প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন নিহত লাভলুর স্ত্রী রাহেনা বেগম, মেয়ে লাবনী আক্তার, ছেলে মামলার বাদী রায়হান কবীর ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন।
বক্তারা বলেন, চেয়ারম্যান শহিদুল হক ও তাঁর ছেলে তমালের নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিএনপি কর্মী লাভলু মিয়াকে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও রহস্যজনক কারণে মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-সংলগ্ন একটি দোকানঘরকে ঘিরে। দীর্ঘদিন ধরে দোকান মালিক ইশতিয়াক বাবু ও ভাড়াটিয়া জাহিদুল হক জোয়ারদারের মধ্যে ভাড়ার মেয়াদ নিয়ে বিরোধ চলছিল। চুক্তি অনুযায়ী জাহিদুল হক ২০২৮ সাল পর্যন্ত ভাড়া থাকতে পারবেন। কিন্তু মালিক ইশতিয়াক সময়ের আগেই তাঁকে দোকান ছাড়তে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে ইশতিয়াক বাবু ঘটনাটি তাঁর মামা সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারকে জানান। জাহিদুল হক অভিযোগ দেন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিকের কাছে। এর মধ্যে শহিদুল হক মানিকের ছেলে তানভির আহমেদ তমাল ফেসবুক আইডি থেকে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকারকে নিয়ে আক্রমণমূলক পোস্ট করেন। এর পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় চরম উত্তেজনা। গত ৫ এপ্রিল শহিদুল হক মানিকের সমর্থকরা পৌর শহরের আলম মার্কেট এলাকায় বিএনপি নেতা লাভলুসহ আরও পাঁচজনকে কুপিয়ে আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় লাভলুকে রংপুর মেডিকেলে নেওয়া হলে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
পরদিন লাভলুর ছেলে রায়হান কবির বাদী হয়ে কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ মোরছালিন হোসেন নামের একজন ছাড়া এজাহারনামীয় অন্য আসামিদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল আমীন সরকার জানান, এর মধ্যে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর হ দ ল হক সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।