সোমালিয়ার আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পুন্টল্যান্ডের বোসাসো বিমানবন্দরকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সম্ভাব্য হামলা থেকে রক্ষায় এ বছরের শুরুতে সেখানে একটি সামরিক রাডার বসিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত মার্চের শুরুতে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ইসরায়েলের তৈরি ইএলএম-২০৮৪ থ্রিডি অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে মাল্টিমিশন রাডারটি বোসাসো বিমানবন্দরের কাছে স্থাপন করা হয়েছে।

সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বিমান চলাচলের তথ্য অনুযায়ী, সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সহায়তা পাঠাতে অব্যাহতভাবে বোসাসো বিমানবন্দর ব্যবহার করছে ইউএই।

এ বছরের শুরুতে আরএসএফের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে সুদান সরকার ইউএইর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে। তবে ইউএই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আরএসএফকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয় না।

আরএসএফ দুই বছর ধরে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

এ বছরের শুরুতে আরএসএফের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে সুদান সরকার ইউএইর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে। তবে ইউএই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আরএসএফকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয় না।

মিডল ইস্ট আইকে একটি আঞ্চলিক সূত্র বলেছে, মার্চের শুরুতে সুদানের রাজধানী খার্তুমের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায় আরএসএফ। এর কিছুদিন পরই ইউএই বিমানবন্দরটিতে ওই রাডার স্থাপন করে। রাডারটির উদ্দেশ্য হলো, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি, বিশেষ করে বোসাসো বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বাইরে থেকে হুতিদের সম্ভাব্য হামলা শনাক্ত করা ও আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া।

আরেকটি আঞ্চলিক সূত্র জানায়, ইউএই গত বছরের শেষ দিকে বোসাসো বিমানবন্দরে রাডারটি স্থাপন করে। তবে মিডল ইস্ট আই এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

দ্বিতীয় সূত্রটি আরও জানায়, আরএসএফকে সহায়তা পাঠাতে ইউএই প্রতিদিন বোসাসো বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই করতে সেখানে নিয়মিত বড় কার্গো বিমান অবতরণ করছে। অনেক সময় একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত বড় চালান পাঠানো হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরও পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আবদুল্লাহি দেনি কিংবা তাঁর প্রশাসন বিমানবন্দরে রাডারের উপস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয়, অভিযোগ সত্য।সালিম সাঈদ সালিম, পুন্টল্যান্ডভিত্তিক সিদরা ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ

মিডল ইস্ট আই ইউএইর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে।

পুন্টল্যান্ড সরকারের স্টেট মিনিস্টার আবদিফাতাহ আবদিনুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরিবর্তে তিনি সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা মিম পাঠিয়ে দেন।

ইউএইর সঙ্গে সোমালিয়া সরকারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বহু বছর ধরে ইউএই দেশটিকে আর্থিক সহায়তা ও সেখানকার আল-শাবাবের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে পুন্টল্যান্ডেও বিশেষভাবে সক্রিয় ইউএই। অঞ্চলটি ভৌগোলিকভাবে আমিরাত ও ইয়েমেনের কাছাকাছি অবস্থিত। পুন্টল্যান্ডে জলদস্যুদের প্রতিহত করতে ইউএই সেখানকার বাহিনীকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

সোমালিয়ার দুটি পৃথক সূত্রের দাবি, পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আবদুল্লাহি দেনি রাডার স্থাপনে সোমালিয়ার ফেডারেল সরকার বা পুন্টল্যান্ড সংসদের কোনো অনুমতি নেননি। পুন্টল্যান্ড একটি কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হলেও এটি সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত।

বিষয়টির খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানেন, এমন একজন বলেছেন, এটি (রাডার স্থাপন) একটি গোপন চুক্তি। মন্ত্রিসভাসহ পুন্টল্যান্ড সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে জানেন না।

মিডল ইস্ট আইকে একটি আঞ্চলিক সূত্র বলেছে, মার্চের শুরুতে সুদানের রাজধানী খার্তুমের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায় আরএসএফ। এর কিছুদিন পরই ইউএই বিমানবন্দরটিতে ওই রাডার স্থাপন করে। রাডারটির উদ্দেশ্য হলো, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি, বিশেষ করে বোসাসো বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বাইরে থেকে হুতিদের সম্ভাব্য হামলা শনাক্ত করা ও আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া।

পুন্টল্যান্ডভিত্তিক সিদরা ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ সালিম সাঈদ সালিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরও পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আবদুল্লাহি দেনি কিংবা তাঁর প্রশাসন বিমানবন্দরে রাডারের উপস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

সালিম বলেন, এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয়, অভিযোগ সত্য। দানির সঙ্গে ইউএইর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে এ ঘটনা তাঁকে মোটেও বিস্মিত করেনি বলে উল্লেখ করেন সালিম।

আরও পড়ুনব্যর্থতা কাটাতে পারবে সোমালিয়া?৩০ অক্টোবর ২০১৬.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র শ সহ য ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনার আহ্বান

কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর সোমবার দেশটির রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে বসেন। সম্মেলন শেষে তাঁরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এই যৌথ বৈঠকে প্রায় ৬০টি দেশ অংশ নেয়। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠক চলাকালে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল।

হামাস জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচ সদস্য ও কাতারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির শীর্ষ কোনো নেতা নিহত হননি। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার জরুরি সম্মেলনটির আহ্বান করেছিল কাতার।

সম্মেলন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান কার্যক্রম রোধে সব ধরনের আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে (বৈঠকে অংশগ্রহণকারী) সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ এসব কার্যক্রম হতে পারে, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা এবং দেশটির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা।’

কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইনসহ জর্ডান, মিসর এবং মরক্কো এরই মধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব দেশও গতকালের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ইউএই, বাহরাইন এবং মরক্কোর শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে অংশ নেননি।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবি (বাঁয়ে) ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। জেরুজালেমে, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনার আহ্বান