গোপন চুক্তিতে সোমালিয়ায় ইসরায়েলি রাডার স্থাপন করেছে আরব আমিরাত
Published: 27th, April 2025 GMT
সোমালিয়ার আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পুন্টল্যান্ডের বোসাসো বিমানবন্দরকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সম্ভাব্য হামলা থেকে রক্ষায় এ বছরের শুরুতে সেখানে একটি সামরিক রাডার বসিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত মার্চের শুরুতে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ইসরায়েলের তৈরি ইএলএম-২০৮৪ থ্রিডি অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে মাল্টিমিশন রাডারটি বোসাসো বিমানবন্দরের কাছে স্থাপন করা হয়েছে।
সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বিমান চলাচলের তথ্য অনুযায়ী, সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সহায়তা পাঠাতে অব্যাহতভাবে বোসাসো বিমানবন্দর ব্যবহার করছে ইউএই।
এ বছরের শুরুতে আরএসএফের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে সুদান সরকার ইউএইর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে। তবে ইউএই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আরএসএফকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয় না।আরএসএফ দুই বছর ধরে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
এ বছরের শুরুতে আরএসএফের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অভিযোগে সুদান সরকার ইউএইর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে। তবে ইউএই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা আরএসএফকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয় না।
মিডল ইস্ট আইকে একটি আঞ্চলিক সূত্র বলেছে, মার্চের শুরুতে সুদানের রাজধানী খার্তুমের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায় আরএসএফ। এর কিছুদিন পরই ইউএই বিমানবন্দরটিতে ওই রাডার স্থাপন করে। রাডারটির উদ্দেশ্য হলো, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি, বিশেষ করে বোসাসো বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বাইরে থেকে হুতিদের সম্ভাব্য হামলা শনাক্ত করা ও আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া।
আরেকটি আঞ্চলিক সূত্র জানায়, ইউএই গত বছরের শেষ দিকে বোসাসো বিমানবন্দরে রাডারটি স্থাপন করে। তবে মিডল ইস্ট আই এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
দ্বিতীয় সূত্রটি আরও জানায়, আরএসএফকে সহায়তা পাঠাতে ইউএই প্রতিদিন বোসাসো বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ বোঝাই করতে সেখানে নিয়মিত বড় কার্গো বিমান অবতরণ করছে। অনেক সময় একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত বড় চালান পাঠানো হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরও পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আবদুল্লাহি দেনি কিংবা তাঁর প্রশাসন বিমানবন্দরে রাডারের উপস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয়, অভিযোগ সত্য।সালিম সাঈদ সালিম, পুন্টল্যান্ডভিত্তিক সিদরা ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বিশেষজ্ঞমিডল ইস্ট আই ইউএইর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে।
পুন্টল্যান্ড সরকারের স্টেট মিনিস্টার আবদিফাতাহ আবদিনুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরিবর্তে তিনি সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা মিম পাঠিয়ে দেন।
ইউএইর সঙ্গে সোমালিয়া সরকারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বহু বছর ধরে ইউএই দেশটিকে আর্থিক সহায়তা ও সেখানকার আল-শাবাবের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে পুন্টল্যান্ডেও বিশেষভাবে সক্রিয় ইউএই। অঞ্চলটি ভৌগোলিকভাবে আমিরাত ও ইয়েমেনের কাছাকাছি অবস্থিত। পুন্টল্যান্ডে জলদস্যুদের প্রতিহত করতে ইউএই সেখানকার বাহিনীকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সোমালিয়ার দুটি পৃথক সূত্রের দাবি, পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আবদুল্লাহি দেনি রাডার স্থাপনে সোমালিয়ার ফেডারেল সরকার বা পুন্টল্যান্ড সংসদের কোনো অনুমতি নেননি। পুন্টল্যান্ড একটি কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হলেও এটি সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত।
বিষয়টির খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানেন, এমন একজন বলেছেন, এটি (রাডার স্থাপন) একটি গোপন চুক্তি। মন্ত্রিসভাসহ পুন্টল্যান্ড সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে জানেন না।
মিডল ইস্ট আইকে একটি আঞ্চলিক সূত্র বলেছে, মার্চের শুরুতে সুদানের রাজধানী খার্তুমের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারায় আরএসএফ। এর কিছুদিন পরই ইউএই বিমানবন্দরটিতে ওই রাডার স্থাপন করে। রাডারটির উদ্দেশ্য হলো, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি, বিশেষ করে বোসাসো বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বাইরে থেকে হুতিদের সম্ভাব্য হামলা শনাক্ত করা ও আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া।পুন্টল্যান্ডভিত্তিক সিদরা ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ সালিম সাঈদ সালিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং কৃত্রিম উপগ্রহের ছবি প্রকাশ্যে আসার পরও পুন্টল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আবদুল্লাহি দেনি কিংবা তাঁর প্রশাসন বিমানবন্দরে রাডারের উপস্থিতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
সালিম বলেন, এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয়, অভিযোগ সত্য। দানির সঙ্গে ইউএইর দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে এ ঘটনা তাঁকে মোটেও বিস্মিত করেনি বলে উল্লেখ করেন সালিম।
আরও পড়ুনব্যর্থতা কাটাতে পারবে সোমালিয়া?৩০ অক্টোবর ২০১৬.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র শ সহ য ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানের এল-ফাশারে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত ৪১ বেসামরিক
সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশারে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর কামানের গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ৪১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে শহরের আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনী শহরে আরএসএফের আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, ৬০০ আরএসএফ যোদ্ধাকে করেছে এবং ২৫টি সামরিক যানবাহন ধ্বংস করেছে।
সেনাবাহিনীর এই বিবৃতির বিষয়ে বিদ্রোহী আধা সামরিক সামরিক বাহিনী আরএসএফর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
সোমবার থেকে এল-ফাশেরে সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে, যার ফলে শহরের মানবিক সংস্থাগুলো বেসামরিক নাগরিকদের খাবার বিতরণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
এই মাসের শুরুতে, সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পর আরএসএফ শহরের জমজম শরণার্থী শিবিরের নিয়ন্ত্রণ দখল করার দাবি করে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, এই লড়াইয়ের ফলে কমপক্ষে ৪০০ বেসামরিক মানুষ নিহত এবং প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
২০১৪ সালের ১০ মে থেকে, সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে এল ফাশারে ভয়াবহ লড়াই চলছে। আরএসএফের দারফুরের প্রায় পুরো বিশাল পশ্চিমাঞ্চল দখল করে নিয়েছে। তারা দারফুরের রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশার অবরোধ করে রেখেছে। কিন্তু শহরটি দখল করতে পারেনি। সেখানে সেনাবাহিনী-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বারবার তাদের পিছনে ঠেলে দিয়েছে।
ক্ষমতার দখল ঘিরে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই চলছে। জাতিসংঘ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বলে অনুমান করা হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ