জাকসু নির্বাচনের আগে বিচার চান শিক্ষার্থীরা
Published: 2nd, May 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ফিরছে ৩২ বছর পর। এ জন্য গত বুধবার মধ্যরাতে নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। একই দিনে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
তবে নির্বাচনের আগে জুলাই আন্দোলনে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ঐকমত্য দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে বিচারকার্য সম্পন্ন না হলে নির্বাচন বর্জনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ছাত্রদল। বিচার না হলে নির্বাচন করতে দেবে না বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। তবে ছাত্র ইউনিয়ন (অমর্ত্য-ঋদ্ধ) ও ছাত্রশিবির বলছে, নির্বাচন ও বিচারকাজ একসঙ্গে চলতে পারে।
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর ভিত্তিতে ২৫৯ শিক্ষার্থী, ৯ শিক্ষক এবং দুই কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির সুপারিশে জড়িতদের তিন ভাগে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার আশ্বাস দিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ২৯ জুনের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান।
এ নিয়ে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমরা আশ্বাসে সন্তুষ্ট নই। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যেই হোক, বিচারের আওতায় আনতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। নয়তো প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব।
নির্বাচন বর্জনের হুঁশিয়ারি ছাত্রদলের
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিচারের দাবিতে শুরু থেকে সরব শাখা ছাত্রদল। এ নিয়ে কয়েক দফায় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ও কর্মসূচি পালন করেছে। নির্বাচনকে সাধুবাদ জানালেও বিচারের দাবিতে অনড় সংগঠনটি।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো.
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ‘হামলায় জড়িতদের বিচার করতে হবে। উপাচার্যও অঙ্গীকারবদ্ধ। বিচার শেষ না হলে আমরা নির্বাচন বর্জন করব।’
বিচার ও নির্বাচন একসঙ্গে চায় শিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন
জাকসু নির্বাচনের আগে জুলাই হামলায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ঐকমত্য ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র ইউনিয়ন (অমর্ত্য-ঋদ্ধ)।
ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের (অমর্ত্য-ঋদ্ধ) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, জাকসু হওয়ার আগে জুলাই হামলার বিচার হোক। যদি প্রশাসন না করতে পারে, তাহলে আমরা পদক্ষেপ নেব। দুটি একসঙ্গেও চলতে পারে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জাকসু ও বিচার প্রক্রিয়া পাশাপাশি চলতে পারে। দুটিই জরুরি। প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত শাস্তিগুলো যথাসময়ে হওয়া উচিত। অন্যথায় তা নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা হবে। বিচারের কারণে নির্বাচন না হলে আমরা ধরে নেব, প্রশাসনের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি থেকে নির্দেশ এসেছে।’
বিচার না হলে জাকসু নয়
বিচার না হলে জাকসু নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখা।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিচার করতে হবে। তা না হলে এই প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। যথাসময়ে বিচার নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল পরিবেশ পরিষদের সভা অনুযায়ী নির্বাচন ও বিচার একসঙ্গে চলতে হবে। আগামী ২৯ জুনের মধ্যে আশা করি বিচার শেষ করা যাবে। বিচারের পর জাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন
নির্বাচনের তোড়জোড়ের আগে থেকে জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্র সংগঠনগুলো। এ নিয়ে কমিটি গঠন করে জাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন আনা হয়েছে। হলের পাশাপাশি গুগল ফরম তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছে উন্মুক্ত মতামত চাওয়া হয়। এর ভিত্তিতে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিটি। নতুন গঠনতন্ত্রে ১১টি পদ বাড়িয়ে ২৭টি করা হয়েছে। এর আগে পদ ছিল ১৬টি।
এ ছাড়া নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ থেকে ‘ছাত্র’ ছেঁটে ‘শিক্ষার্থী’ যুক্ত করা হয়েছে। তবে শুধু পদ বাড়ানো ছাড়া গঠনতন্ত্র সংস্কারের সব ক্ষমতা নির্বাচিত সংসদের। এ নিয়ে জাকসু-সংক্রান্ত পরিবেশ পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে জাকসুর কার্যক্রম ছিল না। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে আমরা কাজ করেছি।’
গঠনতন্ত্রে জাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল
মামুন বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাকসু
সভাপতির স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। সভাপতির অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় বল প্রয়োগের সুযোগ কমানো উচিত।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গঠনতন ত র উপ চ র য ছ ত রদল অমর ত য একসঙ গ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।
ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।
আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।