গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, “যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পুরো সমাজের মধ্যে আবার একটা নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।”

তিনি বলেছেন, “গণ–অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেখানে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকারের ভূমিকা নির্লিপ্ত, কোথাও তাদের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। বরং হামলা-নির্যাতনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে।”

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নাগরিক সংহতি সমাবেশ’–এ তিনি এমন মন্তব্য করেন।

এই সমাবেশের আয়োজন করা হয় ‘যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায়মুক্তি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রতিবাদে’। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে এই সমাবেশ করা হয়।

সমাবেশে আনু মোহাম্মদ বলেন, “আজ আমরা আশাহত হয়ে দাঁড়িয়েছি। যে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়ছে, যে নারীরা অধিকারের জন্য লড়াই করছে, তাদের ওপরই হামলা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বললে ইসলামবিরোধী অপপ্রচারের ট্যাগ লাগিয়ে তাদের দমন করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এর প্রতিবাদ জানালে কিছু ছাত্র সংগঠন গণতন্ত্রকামী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। নারীদের টার্গেট করে তারা হামলা করছে। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা হয় সেটাকে ইসলামবিরোধী কথা বলে অপপ্রচার চালায়। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা রাজনীতিতে ফায়দা নিতে চায়।”

তিনি অভিযোগ করেন, নারী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, শিক্ষকসহ যেকোনো স্তরের মানুষ যখন নিজেদের অধিকার আদায়ে কথা বলেন, তখনই তাঁদের ওপর হামলা হয়। আর যারা হামলা করে তারা রক্ষা পায়, কারণ সরকারের ভেতরেই তাদের মদদদাতা রয়েছে।

একজন যুদ্ধাপরাধীর দায়মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এ টি এম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালে একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা দলিল-প্রমাণসহ ছিল। আদালত যদি কোনো ত্রুটির কারণে আগের রায় বাতিলও করে, তাহলেও যুদ্ধাপরাধের সত্যতা তো মুছে ফেলা যায় না।”

তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ইতিহাসের বিবেচনায় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, তাঁকে নির্দোষ ঘোষণার মাধ্যমে ইতিহাসকেই বিকৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৭১–এর শহীদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।”

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, “জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বর্তমান তরুণ কর্মীদের অনেকেই ৭১ সালে জন্মায়নি। তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি ঠিকই, কিন্তু তারা যদি সেই রাজনীতি ধারণ করে, তবে সেই অপরাধের দায় থেকেও তারা মুক্ত থাকতে পারে না।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলে প্রচার করা হচ্ছে—এটা ভয়ংকর মিথ্যাচার। ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া মানুষের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। সুতরাং, তাঁদের হত্যাকারীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলা মানে ইসলামেরই অবমাননা করা।”

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধাপরাধী আজহারের খালাসের প্রতিবাদে মশাল মিছিলে ছাত্র শিবির দুই দফা হামলা চালায়। ১৯৯৩ সালে শহীদ রিমুর হত্যার মতোই আজ আবার শিবির সন্ত্রাস শুরু করেছে। রাবিতে সন্ত্রাসের এই নবতর ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামো বিপন্ন হতে বাধ্য।”

তিনি আরো বলেন, “ছাত্ররাজনীতিকে দখলের হাতিয়ার বানিয়ে যারা ক্যাম্পাসে সহিংসতা ছড়াচ্ছে, তাদের প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিনসহ অন্যান্যরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ইসল মব র ধ য দ ধ পর ধ ব শ বব দ য ম হ ম মদ পর ধ র র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদে সংরক্ষিত আসন সংস্কার: আশার আলো নাকি মরীচিকা
  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন