মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন ফেরত এসেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে: আসিফ নজরুল
Published: 4th, July 2025 GMT
মালয়েশিয়ায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন ইতিমধ্যে দেশে ফেরত এসেছেন জানিয়ে প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপরও এই অভিযোগে আটক হয়ে যাঁরা ফেরত আসবেন, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে এ কথাগুলো বলেছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এর আগে শুক্রবার কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জঙ্গি–সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করার কথা জানান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শ্রমিকদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ করে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন একটি চক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। আটক বাংলাদেশি শ্রমিকেরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর কাছে অর্থ পাঠাতেন।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ ইসমাইল বলেন, চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে নিশানা করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উগ্র ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিত। আটক ৩৬ বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে (বাংলাদেশে) ফেরত পাঠানো হবে। বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। যাঁদের সংশ্লিষ্টতার মাত্রা কম, তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর যাঁরা গভীরভাবে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। কয়েক লক্ষ বাঙালি ওখানে কাজ করছে। এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ আসে জঙ্গিবাদে জড়ানোর, এটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমাদের এবং মালয়েশিয়ার দুই দেশের জন্যই এটা উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়।’
বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনজন অলরেডি (ইতিমধ্যে ফেরত এসেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা যখনই বাংলাদেশে ফেরত আসবে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা জড়িত থাকলে, উপযুক্ত প্রমাণ নিজেরা পেলে বা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ থেকে পেলে আমরা অবশ্যই তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাব। আর আমরা বদ্ধপরিকর, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করছি, একসাথে কাজ করব। মালয়েশিয়ার মাটিতে হোক, বাংলাদেশের মাটিতে হোক, কোনো রকম জঙ্গিবাদ আমরা প্রশ্রয় দেব না। এই ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থান নিব।’
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে আইএস–সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর জঙ্গি সন্দেহে শত শত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তবে গত কয়েক বছরে অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা অভিযান জোরদার করার পর থেকে গ্রেপ্তারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
কারখানা, চাষাবাদ ও নির্মাণ খাতে শ্রমিকের চাহিদা পূরণে মালয়েশিয়া বিদেশি জনশক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স ব দ কর উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন সফর করবেন। গতকাল শনিবার দামেস্কে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত টম ব্যারাক এ ঘোষণা দেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম সফর।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ১০ নভেম্বরের দিকে এ সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে।
গতকাল বাহরাইনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিবিষয়ক সম্মেলন ‘মানামা ডায়ালগ’-এর ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টম ব্যারাক। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, শারার এ সফরে সিরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসলামিক স্টেটবিরোধী জোটে যোগ দেবে।
আরও পড়ুনযে মার্কিন জেনারেল একদিন গ্রেপ্তার করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে সাক্ষাৎকার দিলেন আল-শারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে অবগত এক সিরীয় সূত্র জানায়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শারা ওয়াশিংটন সফরে যেতে পারেন।
কোন কোন বিদেশি নেতা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন, তার একটি ঐতিহাসিক তালিকা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে সংরক্ষিত আছে। সে তালিকায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াশিংটন সফর করেননি। গত সেপ্টেম্বরে শারা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা একাধিক বিদেশ সফর করেছেন। আসাদ আমলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিরিয়ার সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর সম্পর্ক পুনর্গঠন করাই এসব সফরের লক্ষ্য।
গত বছরের ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর শারার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যরা একাধিক বিদেশ সফর করেছেন। আসাদ আমলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সিরিয়ার সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর সম্পর্ক পুনর্গঠন করাই এসব সফরের লক্ষ্য।ব্যারাক বলেন, ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো ২০১৪ সাল থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাতে সিরিয়াকে যুক্ত করা। আইএস তাদের উত্থানের সময় ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল দখল করে রেখেছিল।
ব্যারাক বলেন, ‘আমরা সবাইকে এ জোটের অংশীদার করার চেষ্টা করছি, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
শারা একসময় আল-কায়েদার সিরীয় শাখার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে এক দশক আগে তাঁর নেতৃত্বাধীন আসাদবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওই নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরে আইএসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। আল–কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওসামা বিন লাদেন।
আরও পড়ুনসিরিয়ার নেতা শারাকে গ্রেপ্তারে ১ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করল যুক্তরাষ্ট্র২১ ডিসেম্বর ২০২৪যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা ২০১৯ সালে সিরিয়ায় আইএসের সবশেষ শক্ত ঘাঁটি দখলমুক্ত করে। তবে বিভিন্ন সূত্র গত জুনে রয়টার্সকে বলেছে, আইএস আসাদ সরকারের পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিরিয়া ও প্রতিবেশী দেশ ইরাকে নতুন করে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।