ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আবার বেড়ে গেছে। মে মাসে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কোরবানির ঈদ, ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সরবরাহসহ কয়েকটি কারণে মানুষের হাতে নগদ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা কমে ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকায় নেমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমে হয় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এরপর মার্চে অবশ্য মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এপ্রিলে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা কমে। এবার ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায় নামে। মে মাসে আবার মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে, শুধু মে মাসেই ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) এবং বাজারে প্রচলিত টাকাও (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন) বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে হয় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। অবশ্য মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। একই সময়ে বাজারে প্রচলিত টাকার পরিমাণও বেড়ে যায়। জানুয়ারিতে বাজারে প্রচলিত টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। আর মার্চে তা বেড়ে হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এপ্রিলে রিজার্ভ মানি কমলেও মে মাসে আবার বাড়ে। এপ্রিলে রিজার্ভ মানি কমে হয় ৩ লাখ ২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা মে মাসে বেড়ে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ কোটি টাকায় ওঠে।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোরবানির আগে সব সময় গরু-ছাগল কেনাসহ কেনাকাটার জন্য নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। এ জন্য এই সময়ে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। মে মাসে ৬ ব্যাংককে একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠনের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ খবরে ওই সব ব্যাংক থেকে নিজেদের টাকা তুলে নেন আমানতকারীরা। ফলে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া কিছু ব্যাংককে টাকা ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে বাজারে ছাপানো টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে সেটির কার্যকারিতা কম। নানামুখী সংকট মোকাবিলায় টাকা ছাপাতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এই টাকা ধারও দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগপর্যন্ত ব্যাংক থেকে মানুষের হাতে নগদ টাকা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। কারণ, তখন কয়েকটি ব্যাংক থেকে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে টাকা বের করে নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অন্যতম ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এ জন্য সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে এই গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে দেয়। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। সরকার বদলের পর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টে মানুষের হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে কমে হয় ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ। অক্টোবরে তা আরও কমে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকায় এবং নভেম্বরে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকায় নামে। ডিসেম্বরে আরও কমে তা হয় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছিল। আবার দীর্ঘ সময় সুদহার ৯ শতাংশে আটকে রাখার কারণেও কমে গিয়েছিল আমানতের সুদ। তাতে অনেকেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখার ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন। এতে ব্যাংকগুলো তারল্যসংকটে পড়ে। এমন অবস্থায় সুদহারের সীমা তুলে নেওয়া হয়। এরপর ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। ফলে আমানত বাড়ছে, তবে তা আশাব্যঞ্জক না।
দেখা গেছে, গত মার্চে ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬১১ কোটি টাকা, যা এপ্রিল মাসে বেড়ে হয় ১৮ লাখ ২০ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। মে মাসে ব্যাংক আমানত বেড়ে হয় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা।
এ নিয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে যাওয়া ও কমা নিয়মিত ঘটনা। নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেলে ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন গ্রাহকেরা। ঈদের কারণে নগদ টাকা তোলা বেড়েছিল। এ ছাড়া আমানতের সুদহার বাড়লেও ব্যাংকের আমানত তেমন বাড়ছে না। ফলে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল বেশি নেই। সামনে ঋণের চাহিদা বাড়লে সুদহার আরও বাড়বে।
এদিকে নানা অনিয়মের কারণে আর্থিক সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে নিয়ে একটি বড় ইসলামি ধারার ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী ও এক্সিম। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার। অন্য চার ব্যাংকের মালিকানা এস আলম গ্রুপের হাতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগদ ট ক র পর ম ণ ট ক র পর ম ণ ব র পর ম ণ ব ড় ইসল ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//