দখলদারি ও নির্বাচনী মনোনয়ন ঘিরে চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, পাল্টাপাল্টি খুন থামছেই না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারহাট এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপির শক্ত দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। কমিটি ও পদ স্থগিত করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

বর্তমানে রাউজান বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই নেতার অনুসারী। এই দুই নেতার একজন হলেন দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী; অন্যজন উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। সংঘর্ষের সর্বশেষ ঘটনাটিও ঘটেছে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। গোলাম আকবর খন্দকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার এ নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। আবার একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করা হয়েছে।

সংঘর্ষের পর রাউজানের পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা, স্কুল ও কলেজশিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা হেনস্তা হওয়ার ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে এই প্রতিবেদককে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবার সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই ‘শক্তি’ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। পাশাপাশি রাউজানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতেই একের পর এক সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। যাঁর হাতে ক্ষমতা, তাঁরাই নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বালুমহাল ও ইটভাটা, ইট-বালু সরবরাহের ব্যবসা, বিল ভরাটের কাজে মাটি-বালু সরবরাহের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেন। পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাউজানের ওপর দিয়ে কাঠ ও মদ চোরাচালান হয়। অনেক সময় অস্ত্র পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় রাউজান। এসবের নিয়ন্ত্রণ নিতেই স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উভয় পক্ষের দখলদারি রয়েছে।

দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে। গোলাম আকবর খন্দকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার এ নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। আবার একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর সেদিন রাতেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া স্থগিত করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও। রাউজানের ঘটনা তদন্ত করতে গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর। কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালকে। সাত দিনের মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান আজীজুল বারী হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাউজানে দুই প্রার্থী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। সেখানে ইতিমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আগামী রোববার সরেজমিনে গিয়ে নেতা-কর্মী, ভুক্তভোগীসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’

আরও পড়ুনরাউজানে খুন, পাল্টা খুন চার দশক ধরে ০৪ মে ২০২৫গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র ব এনপ র কম ট র র পর স পর স থ কর ম র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক

চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।

সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।

গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।

ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাউজানে উত্তেজনা থামেনি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিএনপির দুই পক্ষের
  • থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
  • মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার