খাবার-থাকার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হামজা
Published: 17th, January 2025 GMT
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা লিগ বলা হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে। সেই প্রতিযোগিতার সাবেক চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা দেওয়ান চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার অনুমতি পেয়েছেন। তাঁর অপেক্ষায় পুরো দেশ। ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা আছে হামজার।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, লেস্টারের মতো বড় ক্লাবে যে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা পান হামজা, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সেটা তাঁকে দিতে পারবে কিনা? জানা গেছে, ওই ক্লাবে ১৭ জনের মতো নাকি ফিজিও আছেন। ইউরোপের উন্নত জীবন, আধুনিক মাঠ, হাই প্রোফাইল কোচ, নিউট্রিশন, থাকার ব্যবস্থা; লেস্টারে গত ২০ বছর ধরে তা পেয়ে আসা হামজাকে বাফুফে কতটা দিতে পারবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
বুধবার লন্ডন থেকে আড়াই ঘণ্টা জার্নি করে লেস্টার সিটির হোমগ্রাউন্ড কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাওয়া বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে দুই ঘণ্টার সৌজন্য সাক্ষাতে বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন হামজা চৌধুরী। খোলামেলা আলোচনায় বাংলাদেশের ফুটবলারদের খাবারের মান, ম্যাচের সময় প্লেয়াররা কোথায় থাকেন, কোথায় অনুশীলন করেন, ফুটবলারদের ইনজুরি প্রতিরোধের ব্যবস্থাসহ আরও অনেক বিষয়ে তাবিথ আউয়ালের কাছে জানতে চান লেস্টার সিটির এ তারকা।
সেখানে থাকা বাফুফের নির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ বৃহস্পতিবার সমকালের কাছে তাবিথ ও হামজার আলোচনার এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বাফুফে সভাপতিও সাধ্যের মধ্যে সবটুকু করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তিনি।
লন্ডন থেকে লেস্টার সিটির হোম গ্রাউন্ড কিং পাওয়ার স্টেডিয়াম যেতে সড়ক পথে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার মতো। হামজার আমন্ত্রণে বুধবার প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার ও ক্রিস্টাল প্যালেসের ম্যাচ দেখতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যান তাবিথ আউয়াল। গ্যালারির প্লেয়ার লাউঞ্জে বসে ভিআইপি ব্যবস্থায় হামজার বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে খেলা দেখেছেন বাফুফে সভাপতি। প্রিমিয়ার লিগে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে অবশ্য মাঠে নামা হয়নি হামজার। তাঁর দল হারে ২-০ গোলে। ম্যাচ শেষে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় তাবিথ আউয়ালের জন্য নৈশভোজের ব্যবস্থা করেন হামজা নিজেই। সেখানে ছিলেন হামজার বাবা-মা। ছিলেন বাফুফের নির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ।
এই সময়ে আলোচনার মূলেই ছিল ফুটবল। কবে নাগাদ জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবেন লিস্টার সিটির এ ডিফেন্ডার, তা নিয়েও কথা হয়েছে। সেটা অবশ্য হামজা এবং তাঁর ক্লাবের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান।
ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচের আগে ২০ দিনের জন্য সৌদি আরবে ক্যাম্প করবে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। ম্যাচের আগে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ক্যাম্পে হামজাকে রাখতে চায় ফেডারেশন। সেটা কতটা বাস্তবে রূপান্তর করা যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ফিফার নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের ফুটবলার ম্যাচের ৭২ ঘণ্টা আগে ক্লাব থেকে ছাড়পত্র পান। সেটা হলে হামজার জন্য সৌদি ক্যাম্পে যোগ দেওয়াটা কঠিন। তখন হয়তো সম্ভাব্য ভেন্যু শিলংয়ে গিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে যোগ দেবেন হামজা।
আবার হামজাকে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সারির লিগে খেলা শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে দেওয়ার চিন্তা করছে লেস্টার। দু’পক্ষ সমঝোতায় এলে হয়তো সৌদির ক্যাম্পে তপু বর্মণ-শেখ মোরসালিনদের সঙ্গী হতে পারবেন তিনি। যেহেতু মার্চের ফিফা উইন্ডো ৮ দিনের মতো; ১৭-২৫ তারিখ পর্যন্ত, সেহেতু এই সময় বিভিন্ন দেশ বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলবে। তাই ক্লাবগুলোও ১৪ মার্চের মধ্যে তাদের ফুটবলারদের ছেড়ে দেবে। এই হিসাব করলে আর হামজার সম্ভাব্য নতুন গন্তব্য শেফিল্ড ইউনাইটেড রাজি হলে সৌদি আরবে জাতীয় দলের ক্যাম্পে হামজার যোগ দেওয়াটা সম্ভব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ব থ আওয় ল দ শ র ফ টবল র ফ টবল র ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন
টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’
তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।