মানুষকে সঙ্গ দিতে আসছে ‘মানবীয়’ রোবট
Published: 18th, January 2025 GMT
রোবট কর্মী, মডেল, চিত্রশিল্পী ও চিকিৎসকের কথা আমরা শুনেছি। তাই বলে সঙ্গী! হ্যাঁ, সম্ভবত এটাই ঘটতে চলছে। সম্প্রতি আরিয়া নামের এমন এক তরুণী রোবটকে বাজারে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি রিয়েলবোটিক্স, যার কাজ মানুষকে সঙ্গ দেওয়া।
আরিয়াকে শুধু রোবট বললে ভুল হতে পারে। সে যেন রোবটের চেয়ে বেশি কিছু। সে কথা বলতে পারে, শুনতে পারে, নড়াচড়া করতে পারে। খুশির খবরে হাসতে পারে। দুঃখের খবরে কাঁদতে পারে। গানের তালে মাথা নাড়াতে পারে। সুরের তালে নাড়াতে পারে হাতের আঙুল। এমনকি মন খারাপ হলে অভিমানও করতে পারে! গত কয়েক দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যে উদ্ভাবন, তার চরম উৎকর্ষ ঘটেছে এই রোবটের মধ্যে। বুদ্ধি এবং গভীর অনুভব ক্ষমতা তাকে অনন্য করে তুলেছে। যে প্রযুক্তি তার বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে সে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখছে। এর মাধ্যমে দিনকে দিন আরও স্মার্ট হয়ে
উঠছে আরিয়া।
ধরা যাক, একজন চাকরিজীবী আরিয়াকে বাসায় কিনে আনলেন। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর আপনি কী ধরনের চা বা কফি খেতে পছন্দ করেন, সে তা মনে রাখতে পারবে। আপনি কী ধরনের
গান শুনতে পছন্দ করেন, সে বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ চালিয়ে নিতে পারবে। আবেগাপ্লুত হলে মানুষের কণ্ঠ যেমন আর্দ্র হয়ে ওঠে, তার ক্ষেত্রে তাই ঘটে।
রিয়েলবোটিক্স কোম্পানির স্লোগান হচ্ছে, মানবিক স্পর্শের রোবট। এই কোম্পানি রোবটকে কর্মীর চেয়ে সঙ্গী হিসেবে পরিচিত করাতে চাচ্ছে। শুধু যান্ত্রিক নয়, একটু বেশি মানবিক। সামাজিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানুষ যেমন আচরণ করে, তেমন কিছু। বিশেষ করে যারা মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে পারে। পারস্পরিক আলাপ এবং যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারে।
আরিয়াকে প্রথম দেখা গেছে গত সপ্তাহে লাস ভেগাসে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো ২০২৫-এ। তার দাম ধরা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা (১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার)।
প্রদর্শনীতে আরিয়াকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমার চাহিদা ও অভিপ্রায় কী?’ সে চটপট উত্তর দিয়েছে, ‘আমার কাজ মানুষকে সঙ্গ দেওয়া। অর্থপূর্ণ আলাপচারিতা করা। যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা।’
রিয়েলবোটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু কিগুয়েল সম্প্রতি ফক্স বিজনেসকে জানান, তাদের লক্ষ্য এমন রোবট বানানো, যেগুলো হবে মানুষের মতো। একই সঙ্গে এরা মানুষের একাকিত্ব ঘোচাতে কাজ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা রোবটকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছি। এরা মানুষের রোমান্টিক মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারে। বন্ধুর মতো আচরণ করবে। হার (চলচ্চিত্র) যদি দেখে থাকেন, আমরা সেটি বাস্তবে
রূপ দিচ্ছি।’
কিগুয়েল জানান, হাঁটা এবং মুখভঙ্গি তৈরি রোবট নির্মাণের দুটি মূল চ্যালেঞ্জ। তারা মুখভঙ্গির (আবেগ ও অনুভূতি নির্ভর) ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। আর টেসলার মতো বড় প্রতিষ্ঠানের ওপর হাঁটার প্রযুক্তির উৎকর্ষ ছেড়ে দিয়েছেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বৈশ্বিক রোবটিক্স মার্কেট চলতি বছর ১৪ হাজার ৭২৬ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি মার্কেট রিসার্চ।
প্রযুক্তিনির্ভর আগামীর বিশ্বে নিঃসঙ্গতার যে মহামারি বিজ্ঞানীরা আঁচ করতে পারছেন, তা কি এই রোমান্টিক রোবট দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব? অ্যান্ড্রু কিগুয়েল সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দেননি। তাঁর মতে, আরিয়ার মধ্যে মোটর, ক্যামেরা ও সেন্সরের যে মেলবন্ধন তা আমাদের আশাবাদী করছে। আপাতত আরিয়ার সঙ্গে আপনি আলাপ চালিয়ে নিতে পারবেন। তবে আপেল খাওয়ার সময় যদি এক কামড় তাকে খেতে বলেন, আপাতত সেটা সম্ভব নয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর য় ক
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫