ছাত্রীকে বিয়ে না করা নোবিপ্রবি সেই শিক্ষককে শোকজ
Published: 10th, February 2025 GMT
ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক করার পরও অন্যত্র বিয়ে করায় প্রতারণার অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তাকে এ নোটিস দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, নোবিপ্রবির বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানের (সাময়িক বরখাস্তকৃত) বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ দেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আইন অনুযায়ী কেন আপনাকে চাকরিচ্যুত/চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। একইসঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনে যদি কোন বক্তব্য থাকে তাও অত্র কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে লিখিত আকারে উপস্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে।
নোটিশে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা করে অসদাচরণ করেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন। তিনি বিয়ের দুইদিন আগে (৯ অক্টোবর, ২০২৪) প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী লিখেছিলেন, “২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করেন। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে এবং সব জায়গা থেকে ব্লক দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন।”
অভিযোগপত্রে আরো লিখেছিলেন, “২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন, ‘আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানা বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকায় আমি তার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে।”
তিনি বলেন, “এর মধ্যে কয়েক দফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন। তার পরিবারকে আমি জানাতে বলি। ২০২৪ সালের কুরবানির ঈদের পর তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এরই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সবাই সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত তিনি আমাকে বুঝাতে থাকেন, পরিবার থেকে অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৮ ও ৯ অক্টোবর আমার খালামনিকে মোস্তাফিজ জানান, ‘তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন। আমাকে আগামী ২/৩ বছর স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায়, আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন। আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না।’ আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়।”
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে তড়িঘড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে আমার থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।”
ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরও লিখেন, “তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ অক্টোবর আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে দেখা করি। পরদিন সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে ডিভোর্স দিতে বলি। কিন্তু তারা জানান, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।”
নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছর ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ