নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ছাত্রী হল’ এর রাতের খাবারে নখ কাটার যন্ত্র পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ক্যান্টিন অপারেটরকে অপসারণ করেছে হল প্রশাসন।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে খাওয়ার সময় এক ছাত্রী খাবারে ওই নখ কাটার যন্ত্রটি পান।

হল সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরীক্ষা থাকায় রাত ৮টার দিকে তড়িঘড়ি করে ক্যান্টিন থেকে তরকারি নিয়ে আসেন। খেতে গিয়ে দেখেন, তরকারিতে মরিচা পড়া একটি নখ কাটার যন্ত্র। এর সঙ্গে আবার একটি চাবিও আছে। বিষয়টি তিনি রুমমেটসহ হলের অন্য ছাত্রীদের দেখান। পরে হলের অন্য ছাত্রীরা চাবিসহ নখ কাটার যন্ত্র পাওয়ার কথা প্রাধ্যক্ষকে জানান। 

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, “আমি রাতে খাওয়ার জন্য ক্যান্টিন থেকে গিলা কলিজা নিয়ে আসি। রুমে এসে প্যাকেট খুলে দেখি নেইল কাটার। কাল আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা, খাবারে এটা দেখতে পেয়ে খাবার না খেয়েই থাকতে হয় আমাকে।”

হলের আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “হলের ডাইনিংয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো বালাই নেই। হলের মামাদের ঘরের বাচ্চা-কাচ্চাগুলো সবসময় ডাইনিংয়ে থাকে। কি যে একটা বাজে পরিবেশ এই ডাইনিংয়ের, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।”

তিনি বলেন, “একদিন তো একটা ছেলে অপরিষ্কার হাতে খিচুড়ির পাতিল থেকে খাচ্ছিল। খালারা আবার ওই খাবার আমাদের কাছে বিক্রি করেন। নিজ চোখে দেখার পর থেকে অরুচি চলে আসছে।”

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ মো.

নাসির উদ্দিন বলেন, “খাবারে নখ কাঁটার মেশিন পাওয়ার খবর জানার পর আমরা বর্তমান অপারেটরকে বাদ দিয়েছি। নতুন অপারেটরের জন্য ক্যান্টিন কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন অপারেটর ক্যান্টিন পরিচালনা করবে।”

তিনি বলেন, “আগে থেকেই বর্তমান অপারেটর এর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু আমরা তাকে বারবার সতর্ক করার পরও এ রকম ঘটনা ঘটায় আমরা তাকে বাদ দিয়েছি। আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন অপারেটর নিয়োগ দিচ্ছি। এজন্য বর্তমান অপারেটর এ মাসের শেষ পর্যন্ত ক্যান্টিন চালাবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ