সাধুসঙ্গ, রাখালসেবা, অধিবাস, পূর্ণসেবাসহ নানা রীতি ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাঙ্গ হলো ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অষ্টপ্রহরব্যাপী গুরুকার্যের মাধ্যমে শুরু হয় সাধুসঙ্গ। সর্বশেষ শক্রবার দুপুরে লালন ভক্ত সাধু-গুরুদের পূর্ণসেবার মাধ্যমে উৎসব শেষ হয়েছে। সকালে বাল্যসেবায় পায়েস ও মুড়ি দেওয়া হয় ফকির বাউল ভক্তদের। দুপুরে পূর্ণসেবায় ছিল ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দই। এর পর লালন মতে দীক্ষিতদের খেলাফত (শিষ্যত্ব) প্রদান করেন তাদের নিজ নিজ গুরুরা। 
দোলপূর্ণিমা তিথিতে প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় ফকির লালন শাহর স্মরণোৎসব। সাধু-গুরু, লালন ভক্তদের সরব উপস্থিতি, গান ও গ্রামীণ মেলায় জমজমাট হয়ে ওঠে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এ উৎসবের আয়োজন করে। এবার রমজানের কারণে এক দিনই লালন স্মরণোৎসব হয়েছে। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন। ফলে উৎসবে লালন ভক্ত বাদে অন্য লোকজনের উপস্থিতিও ছিল কম।   
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে লালন একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার মাধ্যমে 
উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। ওই দিন রাত ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে খণ্ড খণ্ড দলে ভাগ হয়ে আসর বসিয়েছেন বাউল সাধুরা। একতারা বাজিয়ে গানে গানে তারা স্মরণ 
করছেন ফকির লালন শাহকে। এ সময় তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। 
উৎসবে আগত ফকির রাজ্জাক শাহ বলেন, ‘সাঁইজি (ফকির লালন) পূর্ণিমা তিথিতে সাধুসঙ্গ করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও এমন আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছি। অষ্টপ্রহরব্যাপী গুরুকার্য, রাখালসেবা, অধিবাস, বাল্যসেবা ও পূর্ণসেবার মাধ্যমে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়। এবার সাধুসঙ্গে আসল বাউলরা অংশ নেওয়ায় কোনো ভিড় বা ঠেলাঠেলি ছিল না। এতে খুশি আমরা।’
ফকির হৃদয় শাহ বলেন, ‘আমরা চাই পারস্পরিক উৎসবে আসা সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হোক। প্রেমের জায়গা গভীর হোক ও 
ঘৃণা দূর হোক। দোলপূর্ণিমা তিথিতে লালন শাহ তাই করতেন।’
গতকাল আখড়াবাড়ির ভারপ্রাপ্ত খাদেম মশিউর রহমান বলেন, দুপুরে পূর্ণসেবার মাধ্যমে শেষ হয়েছে সাধুসঙ্গ। এবারও লালন ভক্ত অনুসারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল আখড়াবাড়ি। আসছে ১ কার্তিক ফকির লালনের তিরোধান দিবসে আবার মিলনমেলায় শরিক হবেন লালন ভক্ত ও প্রেমীরা।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ

ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।

রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।

অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা। 

বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো। 

বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া। 

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। 

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। 

উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। 

রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কপালে ১৩টি এবং থুতনিতে ৪টি সেলাই করা লাগে
  • দেশের পর এবার বিদেশেও ঈদের সিনেমার মুক্তি
  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’