তৈরি পোশাকের অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী রপ্তানি বাড়ছে না। মোট রপ্তানি আয়ে এ ধরনের বাজারের অংশ কমে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের যে গতিপ্রবাহ, তা মূলত দীর্ঘদিনের প্রচলিত বাজারকে কেন্দ্র করেই। গুটিকয়েক বাজারের প্রতি অতিনির্ভরতাকে রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতি রপ্তানি খাতে ঝুঁকি ডেকে আনে। অতিমারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এর বড় উদাহরণ।

প্রচলিত বাজার হিসেবে ২৭ জাতির জোট ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে গণ্য করা হয়। ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইইউ থেকে আলাদা হওয়ার পর যুক্তরাজ্যও প্রচলিত বাজার হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এর বাইরে সব দেশকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত ও তুরস্ক অপ্রচলিত শ্রেণিতে উল্লেখযোগ্য নাম। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের প্রায় সবক’টিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করেছেন। ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে এখনও শুল্ক আরোপ হয়নি। তবে শুল্ক খড়্গ যে নেমে আসবে, তা নিশ্চিত। ট্রাম্প নিজেই জানিয়ে রেখেছেন, ইইউর ওপর নিশ্চিতভাবেই শুল্ক বসানো হবে। এ বাস্তবতায় বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.

জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বড় দেশগুলোর শুল্ক লড়াইয়ে বিপদের কথা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইইউর অর্থনীতি সংকুচিত হলে, সেখানে রপ্তানি কমতে পারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ইইউতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশের মতো। রপ্তানির মোট পরিমাণ ১ হাজার ৩৪২ কোটি ডলারেরও বেশি। এতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ইইউর হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। একইভাবে একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত আট মাসে রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এই বৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মোট ৫০৭ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক গেছে দেশটিতে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৩৫ কোটি ডলার।

প্রচলিত অন্য বাজারের মধ্যে কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। রপ্তানি বাজার হিসেবে কানাডার হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবশ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে হিস্যা কিছুটা কমে এসেছে। গত আট মাসে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রচলিত বাজারে বড় হারে রপ্তানি বৃদ্ধির বিপরীতে অপ্রচলিত শ্রেণির বাজারে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এতে মোট রপ্তানিতে এসব দেশের হিস্যা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত আট মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাকের মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫৩ কোটি ডলারের কিছু কম। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪২৬ কোটি ডলার।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, পোশাক রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পশ্চাত সংযোগ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ উপযোগী অন্যান্য সেবা ও মানসম্পন্ন অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রচল ত ব জ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীতি সুদহার অপরিবর্তিত, বেসরকারি খাতের জন্য সুখবর নেই
  • জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
  • নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
  • সবজির দামে স্বস্তি, মজুরি বৃদ্ধির হার এখনো কম
  • ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন