বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারের দায়িত্ব নিলেন জামায়াতের আমির
Published: 17th, March 2025 GMT
বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ছোট ভাই সাবালক না হওয়া পর্যন্ত ওই পরিবারের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ সোমবার বেলা ১১টায় বরগুনায় ওই কিশোরীর বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এ কথা বলেন তিনি। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারটিকে ন্যায়বিচার পেতে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে শফিকুর রহমান বরগুনা সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি পৌর শহরে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়িতে যান।
বরগুনা পৌর এলাকার ওই পরিবারটি বলছে, ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া কিশোরীকে (১৪) এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন সকালে ওই কিশোরীকে স্থানীয় পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বাড়ির পাশের ঝোপে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবেই বাদীকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই কিশোরীর বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জামায়াতের আমির বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। তার বাবা এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে একটি মামলা করেছেন। কিন্তু এর ঝাল মেটানোর জন্য তার বাবাকে খুন করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি পরিবারের সদস্যদের প্রতি।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘সামাজিকভাবে যদি আমরা এভাবে মজলুমের পাশে সবাই এগিয়ে আসি, তাহলে আশা করি মজলুমরা শক্ত হবে। আর জালিমরা ভয় পাবে। ওদেরকে ভয় দেখাতে হবে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, প্রতি মাসেই আমরা তাদের সঙ্গে থাকব। এই পরিবারের বাচ্চাগুলো তার বাবা থাকা অবস্থায় যেভাবে চলেছে, আমরা আশা করি, তার চেয়ে এক ভাগ বেশি ভালো থাকবে ইনশা আল্লাহ। আমরা এ–ও বলেছি, তাদের একটি নবজাতক শিশু রয়েছে, তার বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই পরিবারের সঙ্গে থাকব। মামলার ব্যাপারে জনাব তারেক রহমান সাহেব দায়িত্ব নিয়েছেন। আর লেখাপড়া, তাদের জীবন নির্বাহ—একটি সাধারণ পরিবারে যেভাবে চলে, আমরা সেভাবে চালাব।’
এরপর শফিকুর রহমান বরগুনা টাউন হল মাঠে দলের এক পথসভায় বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম (মাসুদ), কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ, বরগুনার জেলা আমির মহিবুল্লাহ হারুন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র এ ঘটন বরগ ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
মাদারীপুরে মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের প্রেমের টানে চীনের নাগরিক শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসেছেন। বিয়ে করে বর্তমানে মাদারীপুরে শশুরবাড়িতে আছেন। ভিনদেশি যুবককে দেখার জন্য ওই বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৯)। সুমাইয়া মাদারীপুর শহরের সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা তিন বোন। সুমাইয়া বড়। মেঝ সাদিয়া আক্তার (১২) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট বোন আরিফা (৬)।
চীনের সাংহাই শহরের সি জিং নিং এর ছেলে শি তিয়ান জিং (২৬)। তারা দুই ভাই। বড় শি তিয়ান জিং। তার চীনের সাংহাই শহরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে।
আরো পড়ুন:
‘একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল’
এক বিয়ের বরযাত্রী খেয়ে ফেলল অন্য বিয়ের খাবার
শি তিয়ান জিংকে টিকটকে দেখেন সুমাইয়া। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা আদান-প্রদান হয়। উভয়ই গুগলের মাধ্যমে লেখা অনুবাদ করে মনের ভাব আদান- প্রদান করেন। এক পর্যায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মাত্র চার মাসের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৪ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশ আসেন শি তিয়ান জিং। এরপর এক দিন ঢাকার একটি হোটেলে থাকেন। ২৬ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেচরের সুমাইয়ার বাড়িতে আসেন।
সুমাইয়া, সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম ও তার দুইজন আত্মীয় মিলে ঢাকা থেকে শি তিয়ান জিংকে মাদারীপুরে নিয়ে আসেন। বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারায় মোবাইলে অনুবাদ করে কথা আদান-প্রদান করেন শি তিয়ান জিং। এরপর ২৭ জুলাই তারা বিয়ে করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সুমাইয়ার বাড়িতে মানুষ ভিড় করতে থাকে।
সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘‘টিকটক দেখে আমি ওর ভক্ত হই। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা হয়। পরে দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মাত্র চার মাসের প্রেমের সূত্র ধরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমার কাছে চলে আসবে, তা কখনো ভাবিনি। ও প্লেনে উঠার সময় বলেছে, আমি বাংলাদেশে আসছি। আমি বিশ্বাস করিনি। যখন ইন্ডিয়া এসে আমাকে জানায়, তখন বিশ্বাস করেছি।’’
সুমাইয়া আক্তার আরো বলেন, ‘‘ও ওর মা-বাবাকে আমার কথা বলেছে। তারাও মুসলিম। ওর মা বলেছেন, আমাকে বিয়ে করে চীনে নিয়ে যেতে। তাই শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করেছেন।’’
সুমাইয়া বলেন, ‘‘এরই মধ্যে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। শি তিয়ান জিং এক মাস বাংলাদেশে থাকবে। এর মধ্যে আমার কাগজপত্র রেডি করা হবে। তারপর ও আমাকে চীনে নিয়ে যাবে। আমিও চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
শি তিয়ান জিং বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে। তবে অনেক গরম। আর অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসে। তাই আমার ভয় লাগে। আমি ভালোবেসে চীন থেকে এখানে এসেছি। সুমাইয়াকে বিয়ে করেছি। এখন ওর কাগজপত্র রেডি করে চীনে নিয়ে যাবো। আমার পরিবার সব জানে। তারাই সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যেতে বলেছেন।’’
সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘শি তিয়ান জিং আমাদের এখানে আছে। ও খুব ভালো ছেলে। খুবই অমায়িক। কোনো অহংকার নেই। এক মাস থাকবে এবং আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব খুশি।’’
পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুবেল হাওলাদার জানান, প্রথমে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। পরে সামাজিকভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। চীনে ওই ছেলের ব্যবসা আছে। কিছু দিনের মধ্যে সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যাবে।
ঢাকা/বকুল