ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি, দেশব্যাপী ধর্মঘট আজ
Published: 7th, April 2025 GMT
নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে ডাকা বৈশ্বিক ধর্মঘটে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে আজ সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা। পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে কাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গাজাবাসীর সমর্থনে আজ সোমবার রাজধানী ঢাকায় সংহতি সমাবেশ, বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন। এনসিপি কর্মসূচি ঘোষণা না করলেও দলটির নেতারাও সংহতি জানিয়েছেন সোমবারের বৈশ্বিক ধর্মঘটে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা। এই ডাকের প্রতি সংহতি জানিয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে আজ ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, আইইউবিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে।
‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আজ সোমবার বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংহতি সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে। তারা আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংহতি ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানিয়ে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় আজ সারাদেশে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনের’ দুই সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও এ বি যুবায়েরও এ কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে আজ বিকেল ৫টার দিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ করবে জামায়াত। ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একই সঙ্গে ইসরায়েলের হামলায় হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে আজ বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। ছাত্রদল তাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান এবং দুপুর ১২টায় প্রতিটি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল বের করে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সম্মিলিত বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
ফিলিস্তিন দখলকারী ও গণহত্যাকারী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলকে থামাতে বৈশ্বিক জিহাদ অনিবার্য হয়ে পড়েছে জানিয়ে হেফাজতে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান গতকাল যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা পৃথিবীর সব নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়েছে।
এর প্রতিবাদে বাদ জোহর সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হেফাজত। বৈশ্বিক ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল রাত ৯টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, দলমতনির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র জনতার একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। কোনো দল নয়, বাংলাদেশের পতাকা হাতে রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইউন ভ র স ট ইসর য় ল গণহত য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)