অবৈধ বালু উত্তোলন শুধু নদীভাঙন সৃষ্টি করে জনপদই তলিয়ে নিচ্ছে না, মানুষের প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। কক্সবাজার জেলার মাতামুহুরী নদীতে এ ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তৈরি হওয়া গর্তে পড়ে একই পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা গোটা এলাকায় শোক তৈরি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মাতামুহুরীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রটি কি নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাবে? দুই শিশুর মৃত্যুর দায় কি তাদের নিতে হবে না?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকার মাতামুহুরী নদী থেকে বুধবার শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্তের একটিতে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে কক্সবাজার জেলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড়ি এলাকা ধরে সর্পিকালাকারে এগিয়ে চলা মাতামুহুরী দেশের অন্যতম সুন্দর নদী। এমন নদীর সর্বনাশ করে যাচ্ছে একটি চক্র। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু তুলে যাচ্ছে চক্রটি, কিন্তু প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই। এতে চক্রটিও অবৈধভাবে বালু তোলার স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না।

মাতামুহুরী নদীর মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকায় প্রায় দেড় শ ফুট প্রশস্ত চর জেগে উঠেছে। সেখানে ধান ও সবজি চাষ করা হয়েছে। সেই চর থেকেই চক্রটি অগভীর যন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এতে ছোট-বড় অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্তে আটকে প্রাণ যাচ্ছে শিশুদের। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে মূলত দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। বুধবার মারা যাওয়া এক শিশুর বাবা পেশায় অটোরিকশাচালক, আরেক শিশু তাঁর ভাগনি। সড়কে গাড়ি চালানোর সময়ই তিনি দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে শোকে সড়কের পাশেই ঢলে পড়েন তিনি।

বান্দরবান ও কক্সবাজারের লামা, আলীকদম, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রাণ বলা যায় মাতামুহুরীকে। এসব এলাকার বিশাল কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এ নদীকে ঘিরেই। পাশাপাশি মৎস্যসম্পদ তো আছেই। ফলে এ নদীর সুরক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। অবৈধভাবে ও অবাধে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই। যেভাবেই হোক বালুখেকো চক্রটিকে থামান। আমরা আর কোনো শিশুর মৃত্যু চাই না। প্রশাসন সহায়তা নিয়ে দুই শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়াবে, সেটিও আমাদের কাম্য।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল

ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।

গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। 

ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।

গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। 

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। 

ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়। 

সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের  মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল
  • এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল