‘গুম’ হওয়ার ১৩ বছর: ইলিয়াস আলীর ফেরার আশায় আছেন সিলেটবাসী
Published: 17th, April 2025 GMT
‘আয়নাঘর’ (গোপন বন্দিশালা) থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের কয়েকজন ফিরলে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়ার ব্যাপারেও সিলেটবাসী আশাবাদী হন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম হওয়া ইলিয়াসের সন্ধান এখনো মেলেনি। সিলেট বিএনপি এখনো তাঁর অপেক্ষায় আছে। ইলিয়াস আলী একদিন নিশ্চয়ই ফিরবেন, এ আশায় আছেন সিলেটবাসী।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১৩ বছর পূর্তিতে তাঁকে অক্ষত ফিরে পেতে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে ইলিয়াস ও বিএনপির ‘গুম’ হওয়া নেতা–কর্মীদের সন্ধান ও মুক্তির দাবি করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি দেন দলটির নেতা–কর্মীরা।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে ‘গুম’ করেছে। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় তাঁর উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথে। হরতাল চলাকালে পুলিশের সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন। এ ছাড়া বিএনপি ও ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’ একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
আজ মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর পরিবারের অপেক্ষার অবসান হয়নি, রহস্য এখনো অমীমাংসিত। সিলেট বিএনপি এখনো ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় আছে। তৎকালীন সরকারের নানা আশ্বাস সত্ত্বেও ইলিয়াস আলীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি এখনো জীবিত এবং তৎকালীন সরকারের কিছু ক্ষমতাসীন ব্যক্তি তাঁর অবস্থান সম্পর্কে অবগত।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিন (আশুক), সহসভাপতি মামুনুর রশিদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একের পর এক গুমের ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া অতীতে যেসব ভুলের কারণে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছিল, বর্তমান সরকার যেন সে ভুলগুলো না করে। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জনগণ যেসব অপকর্ম দেখে ক্ষুব্ধ, সেগুলো পরিহার করে সামনের দিকে এগোতে হবে।
কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন লস্কর, সামিয়া বেগম চৌধুরী, গৌছ আলী, লিলু মিয়া ও জিল্লুর রহমান (সুয়েব), যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, তাজরুল ইসলাম (তাজুল), আনোয়ার হোসেন (মানিক), কোহিনুর আহমদ, আবুল কাশেম, মাহবুবুল হক চৌধুরী ও শাকিল মোর্শেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ ও আল আসলাম মুমিন, বিএনপি নেতা লোকমান আহমদ, বদরুল ইসলাম চৌধুরী, তাসনিম শারমিন (তামান্না), আল মামুন খান, মাহবুব আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটবাসীর হৃদয়ের নেতা ইলিয়াস আলীর খোঁজ না পাওয়া আমাদের জন্য গভীর বেদনা ও ক্ষোভের বিষয়। এটি একটি জাতির জন্য চরম লজ্জার। আমরা ন্যায়বিচারের আশায় এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত কমিশন গঠনের জোর দাবি জানাই।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা ইলিয়াস আলীর পাশাপাশি ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়া সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার ও জুনেদ আহমদের সন্ধান ও মুক্তির দাবি জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স সরক র র ন কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’
তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউটকমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।
পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে