রেকর্ড ১৪৩২ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের
Published: 29th, April 2025 GMT
২০২৪ সালে মুনাফার রেকর্ড গড়েছে বেসরকারি খাতের দেশীয় মালিকানাধীন ব্র্যাক ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটি এককভাবে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফাসহ হিসাব করলে ব্যাংকটির সমন্বিত মুনাফা দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা।
আজ মঙ্গলবার ব্র্যাক ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের ইতিহাসে একক কোনো বছরে এটিই রেকর্ড মুনাফা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি এককভাবে মুনাফা করেছিল ৭৩০ কোটি টাকা। সেবার সমন্বিত মুনাফা ছিল ৮২৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের একক মুনাফা বেড়েছে ৪৮৪ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ। আর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সমন্বিত মুনাফা বেড়েছে ৬০৫ কোটি টাকা বা ৭৩ শতাংশ। এক বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফায় এত বেশি প্রবৃদ্ধি আগে কখনো হয়নি।
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছর ব্র্যাক ব্যাংক শুধু নিজেরা রেকর্ড মুনাফা করেছে তা নয়, দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসেও এটি সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের রেকর্ড। দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে যেখানে অতীতে কখনো কোনো ব্যাংকের মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সর্বশেষ দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ২০২৩ সালে মুনাফার যে তথ্য রয়েছে তাতে ওই বছরও সর্বোচ্চ মুনাফা করেছিল ব্র্যাক ব্যাংক, সেটি ছিল ৮২৭ কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। তাতে বছর শেষে সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার মুনাফার এই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটি বলছে, গত বছর আমানত ও ঋণে খুব ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল ব্যাংকটির। পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও খুব ভালো ব্যবসা করেছে। এ কারণে মুনাফায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
রেকর্ড মুনাফা করায় সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে ব্যাংকটি। ২০২৪ সালের জন্য ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত এই লভ্যাংশের মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস। এর আগে ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে নগদ ও বোনাস মিলিয়ে লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০ শতাংশ। সেই হিসাবে গত বছরের জন্য লভ্যাংশের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে।
গতকাল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয়। আগামী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সাধারণ শেয়ারধারীদের অনুমোদনের পর এই লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি নগদ যে লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে শেষ পর্যন্ত এজিএমে সেটি বহাল থাকলে ব্যাংকটি নগদ লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করবে ২২১ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা বোনাস হিসেবে প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে পাবেন সাড়ে ১২টি শেয়ার।
এদিকে রেকর্ড মুনাফার ফলে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসও বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৯৫ পয়সায়। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৩০ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইপিএস ২ টাকা ৬৫ পয়সা বা ৬২ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যও বেড়েছে। গত বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ১১ পয়সায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৭ টাকা ৬০ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য বা এনএভি বেড়েছে ৬ টাকা ৫১ পয়সা বা ১৭ শতাংশের বেশি।
গত বছর ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহও অনেক বেড়ে গেছে। বছর শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬১ টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩৭ টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত দেশের অন্যতম দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ‘BRACBANK’ প্রতীকে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়। ১৮৯টি শাখা, ৭৪টি উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস, ১ হাজার ১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের বিশাল কর্মীবাহিনী নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কর্পোরেট ও রিটেইল সেগমেন্টেও সার্ভিস দিয়ে আসছে। ব্যাংকটি দৃঢ় ও শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এখন সকল প্রধান প্রধান মাপকাঠিতেই ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৮ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক বিগত ২৩ বছরেই দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জামানতবিহীন এসএমই অর্থায়নকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পর ম ণ ছ ল র কর ড ম ন ফ গত বছর র ২০২৩ স ল প রব দ ধ ত বছর র সমন ব ত বছর শ ষ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: বলছে ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েলভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় দুটি মানবাধিকার সংস্থা—বতসেলেম ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থা দুটি বলেছে, ইসরায়েলকে থামানো দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব।
আজ সোমবার মানবাধিকার সংস্থা দুটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় বেসামরিক লোকজনের পরিচয় ফিলিস্তিনি হওয়ার কারণেই কেবল প্রায় দুই বছর ধরে তাঁদের নিশানা করছে ইসরায়েল। এর ফলে ফিলিস্তিনি সমাজে মারাত্মক—কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সংস্থা একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছে। এবার ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি মানবাধিকার সংস্থা এ প্রতিবেদন দেওয়ার পর দেশটির ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলের অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা; গণহারে বাস্তুচ্যুত করা এবং মানুষকে অনাহারে রাখা। এ ছাড়া ইসরায়েলের হামলায় ঘরবাড়িসহ বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংসের ফলে ফিলিস্তিনিরা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বতসেলেমের পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা স্পষ্ট—একটি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।’ জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবাইকে নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে—গণহত্যার মুখে আপনি কী করবেন?’
ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস তাদের প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর ইসরায়েলের হামলা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। অনেক হামলার তথ্য বিস্তারিত আকারে সংগ্রহ করে নথিবদ্ধ করেছে সংস্থাটির নিজস্ব দল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর আগে গাজায় নিয়মিত কার্যক্রম চালাত সংস্থাটি।
ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক গায় শালেভ বলেন, গণহত্যাবিষয়ক কনভেনশনের ২(সি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধু স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চালানো ধ্বংসযজ্ঞই এই ‘যুদ্ধকে’ গণহত্যায় পরিণত করেছে। কোনো কিছুকে গণহত্যা বলার জন্য সনদের পাঁচটি অনুচ্ছেদের—সবকটি পূরণ করার প্রয়োজন নেই।
নিজেদের প্রতিবেদনে দুটি মানবাধিকার সংস্থাই বলেছে, ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটির গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। গাজায় মানুষের দুর্ভোগের জন্য তারাও যৌথভাবে দায়ী। ইউলি নোভাক বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা ছাড়া এটি (গণহত্যা) সম্ভব হতো না। কোনো নেতাই এটি থামানোর জন্য নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’
আরও পড়ুনদ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘে সম্মেলন শুরু আজ১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো এত দিন পর্যন্ত যা করেছে, তার চেয়ে এখন তাদের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আইনি দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন গায় শালেভ। তিনি বলেন, ‘নিজেদের হাতে থাকা সব কৌশল কাজে লাগাতে হবে। নিজেদের চিন্তাভাবনা থেকে আমরা এই কথা বলছি না। এই আহ্বান গণহত্যা কনভেনশনেই জানানো হয়েছে।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। দেশটি থেকে প্রায় আড়াই শ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তারপরও উপত্যকাটিতে গণহত্যা চালানোর কথা স্বীকার করেনি ইসরায়েল সরকার।
আরও পড়ুনগাজায় অপুষ্টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে, সতর্ক করল ডব্লিউএইচও১৩ ঘণ্টা আগে