জিএম কাদেরের বাসায় হামলা: মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে
Published: 31st, May 2025 GMT
রংপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা নিতে কোতয়ালি থানার ওসি গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ আলী।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা রেকর্ডের আল্টিমেটাম দিয়ে আজ শনিবার তিনি জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানায় মামলা করার সময় জাতীয় পার্টি নেতা মিলন, মোকাম্মেল হোসেন চৌধুরীসহ অন্য নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ ইমতি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাহিদ হাসান খন্দকারসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরিফ আলী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে ওসি আতাউর রহমান এক ঘণ্টারও বেশি সময় বসিয়ে রেখে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে ওসি মামলা রেকর্ড করতে পারবেন না বলে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। তার অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যেভাবে পুলিশ সরকারের তাঁবেদারি করেছে, এখন ৫ আগস্টের পর আবারও একই কাজ করছে তারা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রংপুরে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে আরিফ জানান, এজন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ১৭ দিন কারাগারে আটক থাকার পর ৫ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। তা ছাড়া জাতীয় ছাত্র সমাজ রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারের যোদ্ধা ছিল।
ছাত্র সমাজের এই নেতা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন। সন্ধ্যায় তিনি নগরীর সেনপাড়ায় স্কাই ভিউ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনিও (আরিফ) দলের চেয়ারম্যানের সফরসঙ্গী হিসেবে ওই বাসভবনে ছিলেন। রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জিএম কাদেরের বাসভবনে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা জিএম কাদের যে কক্ষে ছিলেন, সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানালার কাচ ভেঙে ফেলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, জিএম কাদেরকে হত্যা করার উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় বাসভবনের সামনে থাকা মোটরসাইকেলে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু থানার ওসি হামলার ঘটনায় মামলা না নিয়ে নানা টালবাহানা করেন। এত বড় ঘটনায় যদি মামলা নেওয়া না হয়, তাহলে আইনের শাসন থাকে কোথায়! তিনি ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন-এই সময়ের মধ্যে মামলা রেকর্ড করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আবারও ওসির কাছে গেলে তিনি লিখিত অভিযোগটি গ্রহণ করে বলেন, আমরা বিষয়টি দেখবো। এ বিষয়ে রাত ১২টার দিকে ওসি আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি নিয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ এম ক দ র জ এম ক দ র র ব স ব সভবন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে জাপা কার্যালয় ভাঙচুর, আহত ১০
রংপুরে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে শনিবার নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া গতকাল বিকেলে বরিশালে জাপার প্রতিবাদ মিছিলে হামলা হয়েছে। এ সময় জাপার পাল্টা হামলায় গণঅধিকার পরিষদের জেলা এবং মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শতাধিক নেতাকর্মী রাতে শহরে প্রতিবাদ মিছিল করে। মিছিলটি ফকিরবাড়ি সড়কে ঢুকে জাপা কার্যালয় ভাঙচুর করেছে।
আহত পাঁচজনকে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন– জেলা সভাপতি শামীম রেজা, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম হাসান, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ফরহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ ফরাজি ও কেন্দ্রীয় মানবধিকারবিষয়ক সম্পাদক মিরাজ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাপার শতাধিক নেতাকর্মীর মিছিলটি ফকিরবাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়। কিছুদূর অগ্রসর হলে ফকিরবাড়ি ও সদর রোড সংযোগমুখে কয়েকজন লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলের ওপর হামলা করে। জাপা কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে হামলাকারীরা দৌড়ে পালায়। কয়েকজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে পড়ে। জাপা কর্মীরা ওইসব দোকানে ঢুকে হামলাকারীদের বেদম পেটায়। পরে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।
মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও মহানগর আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, হামলাকারীরা জাতীয় নাগরিক পার্টির লোকজন। তারা শান্তিপূর্ণ মিছিলে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। বরিশালে এনসিপিকে থাকতে দেওয়া হবে না।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক তৌফিস আহমেদ সাব্বির বলেন, তারা সড়কের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। পাশ দিয়ে যাওয়া জাপার মিছিল থেকে তাদের ওপর হামলা হয়।
রংপুরে মামলা নেয়নি পুলিশ
শনিবার রংপুরে বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘এখন মবের যুগ, মব ভায়োলেন্স চলছে। তবে জাতীয় পার্টি মবে দুর্বল নয়, যে কোনো মব ফেস করতে পারে। কেউ মব করলে আমরা চাই না মব ভায়োলেন্স করতে। তবে কেউ অ্যাকশন করলে আমরা রিঅ্যাকশন করতে প্রস্তুত।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে জি এম কাদেরের রংপুরের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ ইমতি, এনসিপি নেতা নাহিদ হাসান খন্দকারসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলাটি গ্রহণ করেনি পুলিশ। ওসি আতাউর রহমান বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।