বৈষম্যবিরোধী ২ নেতাকে সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ, ছুটে এলেন সারজিস
Published: 1st, June 2025 GMT
রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদকে সেনাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
শনিবার (৩১ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বরে তাদের আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি সেখানে ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে মিডিয়ায় ঘটনার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলেন সারজিস আলম। তিনি জানান, সাংগঠনিক সফর শেষেই মধ্যরাতে রংপুর হয়ে ফিরছিলেন পঞ্চগড়ের পথে। তবে এমন ঘটনা শুনে তিনি নগরীর প্রাণকেন্দ্র পায়রা চত্বরে ছুটে যান। কথা বলেছেন দায়িত্বশীল সেনা কর্মকর্তার সাথে।
তিনি আরো জানান, সেদিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বাড়িতে যে হামলা হয়েছিল সেটির ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রশাসন যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর সেদিন শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টি প্রথমে হামলা চালিয়ে ছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
একই সাথে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে জাতীয় পার্টি দোসর হিসেবে থেকে হাসিনার লুটপাটের ক্ষমতা জায়েজ করেছিল। তাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ন্যায় জাতীয় পার্টিরও বিচার হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে কিছু সময় থেকে পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে আলাপচারিতা শেষে ফের পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে চলে যান সারজিস আলম।
এর আগে, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করে ফিরছিলেন ওই দুই ছাত্রনেতা। হামলার ঘটনায় তাদের সংগঠনের কেউ জড়িত কি না জানতে ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে সেনাবাহিনী।
এসময় বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন ও জেলা সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুকেও ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। এখবর মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গুঞ্জন সৃষ্টি হয় পুরো শহরজুড়ে।
রংপুর মহানগর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি জানান, সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান জানতে চাইলে তারা পায়রা চত্বরেই ছিলেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করতে বলেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু জানান, সেনাবাহিনী তাদের ফোন দিয়ে পায়রা চত্বরে ডেকে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জানতে চায়, সেদিনের হামলায় বিএনপির কেউ জড়িত কি না।
উল্লেখ্য, এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এনসিপির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন, জি এম কাদের ও রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টির ১৮ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা আবেদন করেন।
ঢাকা/আমিরুল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন
টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’
তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।