বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরেও পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা। বিগত ৫৪ বছরেও এ উপজেলায় কোনো বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।

সুনামগঞ্জের অন্যান্য এলাকার মতো জগন্নাথপুরের বাসিন্দারাও ভ্রমণপিপাসু। দর্শনীয় স্থানে সময় কাটানোর সুযোগ খোঁজেন। যথেষ্ট সুযোগ না থাকায় উপজেলার একটি ভবনের ছাদ, নতুন সড়ক, সেতু ও পুকুরপাড়কেই বেছে নিয়েছেন বিনোদনপিপাসুরা। নিজ এলাকা ছেড়ে ছুটছেন দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটন কেন্দ্রে। 

ঈদুল আজহার দিন থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত দেখা গেছে উপজেলার বহু মানুষ কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় রানীগঞ্জ সেতুর প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিচরণ করছেন। সেখানে  তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের ভিড়। সেতুর দুই পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছেন অনেকে। পুরো সেতু এলাকায় ঈদের আনন্দ উৎসব বিরাজ করছে। 

অপর দিকে ঈদে দর্শনার্থীর ঢল নামে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন মজিদপুর পয়েন্ট এলাকায় ছমির উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি মার্কেট ভবনের ছাদে। সেখানে কিছু ফুলের টব ও ছাতা দিয়ে চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা রয়েছে। আছে কফি হাউস। ৫০ টাকা টিকিটে সেখানে গিয়ে সময় কাটান তরুণ-তরুণীরা। অনেকে কফির কাপে জমিয়ে আড্ডা দেন। এ ছাড়া চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের কবিরপুরে আব্দুল হান্নান ছুফি মিয়া চৌধুরীর পুকুরপাড়েও দেখা গেছে দর্শনার্থীর ভিড়। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট বিভাগের মধ্যে অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত একটি উপজেলা হচ্ছে জগন্নাথপুর। এখানে চাকরিরত সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অধিকাংশ জগন্নাথপুর উপজেলাকে দ্বিতীয় লন্ডন বলে থাকেন। এর কারণ, জগন্নাথপুরের সিংহভাগ মানুষ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। দেশের অর্থনীতিতে জগন্নাথপুরের রেমিট্যান্সযোদ্ধারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। প্রবাসী অনেকে ঈদের সময় দেশে আসেন। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও উদ্যোগ নেই। অবকাশ যাপনের ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে যেমন এখানকার মানুষ বঞ্চিত; তেমনি আর্থসামামাজিক উন্নয়নেও এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

সচেতন মহল মনে করছে, উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামের পাশের নলজুর নদীর তীরে, রানীগঞ্জ সেতু এলাকা, মইয়ার হাওরের মহাসড়কের মতো স্থানগুলো হয়ে উঠতে পারে অবকাশ যাপন ও বিনোদনের সম্ভাবনাময় কেন্দ্র। এ ছাড়াও সংস্কারহীন পরিত্যক্ত পাইলগাঁও জমিদার এস্টেট সংরক্ষণ করে পর্যটন স্পট করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক কিছু উৎস আছে যেগুলো কাজে লাগানো গেলে স্থানীয় পর্যায়ে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জগন্নাথপুরে পর্যটন শহর গড়ে তুলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারে।

রানীগঞ্জের বাসিন্দা জুয়েল আহমদ বলেন, ২০২২ সালে রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণ করার পর থেকে সেতু এলাকায় পর্যটকরা ঘুরতে আসছেন। প্রতি বছরই দুই ঈদে মানুষের ঢল নামে সেতুতে। যদি সেতুর পাশে পর্যটন কেন্দ্র করা যায় তাহলে চাঙা হবে অর্থনীতি।

মজিদপুরের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথপুরে কোনো পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় একটি মার্কেটের ছাদ বিনোদনপ্রেমীদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। নানা উপলক্ষে এখানে মানুষের ভিড় জমে।

জগন্নাথপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় মজিদপুর কফি হাউসে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের বন্ধে পরিবা-পরিজন নিয়ে একটু ঘোরাঘুরির জায়গা নেই। এ উপজেলায় কোনো বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় বাধ্য হয়ে কফি হাউসে আসতে হয়। 

উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় সরকারিভাবে একটি পর্যটন বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে দায়িত্বকালীন চেষ্টা করেছিলেন তিনি। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরকত উল্লাহ বলেন, জগন্নাথপুরে তিনি নতুন। এমন সম্ভাবনার দিকগুলো খুঁজে দেখে জনপ্রত্যাশা পূরণে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাঁর। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার কথাও জানান তিনি। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম

সন্তানের নাম দেওয়া একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামে নামকরণ শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি সন্তানের পরিচয়, যা চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

আধুনিক যুগে মুসলিম পরিবারগুলো সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে এমন নাম খুঁজছে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অথচ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর।

ফলে ইসলামের আলোকে মুসলিম সন্তানের নামকরণের গুরুত্ব, আধুনিক নামের প্রবণতা এবং কীভাবে ইসলামি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে।

ইসলামে নামকরণের গুরুত্ব

ইসলামে সন্তানের নামকরণ একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তানের বেলায় পিতার দায়িত্ব হলো তাকে একটি সুন্দর নাম দেওয়া এবং তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়া।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯৪৯)

নাম শুধু একটি পরিচয় নয়, বরং এটি সন্তানের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ইসলামে নামের অর্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১৯০)

এটি প্রমাণ করে যে নামের অর্থ সুন্দর, ইতিবাচক ও ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

আরও পড়ুনদস্তরখানের নামে সুরার নাম০৪ মার্চ ২০২৫রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন।আধুনিক নামকরণের প্রবণতা

আধুনিক যুগে মুসলিম সমাজে নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মা–বাবা এখন এমন নাম পছন্দ করেন, যা সংক্ষিপ্ত, উচ্চারণে সহজ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য। যেমন ‘আয়ান’, ‘ইয়াসির’, ‘জায়ান’, ‘নুয়াইরা’, ‘আদিয়া’ ইত্যাদি নাম বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই নামগুলোর অর্থও ভালো, যেমন ‘আয়ান’ অর্থ ‘ঐশী উপহার’ এবং ‘নুয়াইরা’ অর্থ ‘আলো’ বা ‘দীপ্তি’।

আধুনিক নামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো প্রায়ই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। ‘রায়ান’, ‘ইমান’ বা ‘নূর’–এর মতো নাম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষার শব্দের পাশাপাশি কিছু নাম স্থানীয় সংস্কৃতি থেকেও গৃহীত হচ্ছে, যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।

ইসলামি ও আধুনিক নামের সমন্বয়

ইসলামি নাম বলতে শুধু আরবি নাম বোঝায় না। ইসলাম যেকোনো ভাষার নাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে, যতক্ষণ তা অর্থপূর্ণ ও ইতিবাচক। শায়েখ উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।’ (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, পৃষ্ঠা: ১২৫, দারুল ইফতা প্রকাশনী: ১৯৯৮)

আধুনিক নামকরণে এই নীতি মেনে চলা যায়। যেমন ‘তাহা’ (কোরআনের সুরার নাম), ‘ইলিয়াস’ (একজন নবীর নাম), ‘আমিনা’ (রাসুলের মায়ের নাম) ইত্যাদি নাম ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আধুনিক পরিবেশেও গ্রহণযোগ্য।

নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।শায়েখ সালেহ উসাইমিন (রহ.), ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব

এ ছাড়া ‘জায়নাব’, ‘ফাতিমা’, ‘আলি’, ‘ওমর’ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী নাম আজও জনপ্রিয় এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।

আরও পড়ুনপাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা২৮ জানুয়ারি ২০২৫নামকরণে সতর্কতা

নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

প্রথমত, নামের অর্থ যেন ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কোনো দেব-দেবীর নাম বা শিরকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাম ব্যবহার করা উচিত নয়।

দ্বিতীয়ত, জটিল বা উচ্চারণে কঠিন নাম এড়িয়ে চলা ভালো।

তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য গর্বের এবং সমাজে তার পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।

অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ‘ডায়ানা’র মতো নাম অর্থের দিক থেকে সুন্দর হলেও ইসলামি পরিচয়ের সঙ্গে সব সময় মানানসই না–ও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মা–বাবাকে নামের অর্থ ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

মা–বাবার করণীয় অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ইসলামে নামকরণের জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে।

প্রথমত, সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে নামকরণ করা সুন্নাহ। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৩২)

এই সময়ে আকিকা দেওয়ার রীতিও রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, নাম রাখার আগে পরিবারের সদস্য, আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়।

আধুনিক যুগে নামকরণের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, বই ও অ্যাপের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ, অনেক সময় ভুল অর্থ বা অপ্রমাণিত তথ্য দেওয়া হতে পারে।

নাম শুধু একটি শব্দ নয়, এটি সন্তানের পরিচয়, চরিত্র ও সমাজে তার অবস্থানের প্রতিফলন। তাই মা–বাবার উচিত এমন নাম নির্বাচন করা, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর।

আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ