যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে শেয়ার সূচকে পতনের আভাস, বেড়েছে তেলের দাম
Published: 17th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবাইকে ‘তেহরান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার’ আহ্বান জানানোর পর বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায় তেলের দাম বেড়েছে, শেয়ারবাজারেও পতনের আভাস মিলেছে।
মঙ্গলবার এশিয়া ও ইউরোপের বাজার খোলার আগেই ট্রাম্প হঠাৎ কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সিচুয়েশন রুম (আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত আলোচনার কক্ষ) প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। মার্কিন প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
এর আগে সবাইকে এখনই তেহরান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানান ট্রাম্প। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ইরানের উচিত ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে নেওয়া। ট্রাম্পের এ বক্তব্য ও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ফিউচার্স শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। ইউরোপিয়ান ফিউচার্স কমেছে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সূচকের পতন ঘটতে পারে।
সেই সঙ্গে অপরিশোধিত তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। পরে অবশ্য দাম আবার কিছুটা কমেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৩ দশমিক ৪৭ ডলার হয়েছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৭২ দশমিক শূন্য ৯ ডলার হয়েছে।
বিশ্ববাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানে সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছে। এতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।’
সোমবার মার্কিন বাজার কিছুটা চাঙা ছিল। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান নাকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে জরুরি যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা থেমে যায়। তবে সোমবার ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে বড় হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল, ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো।
এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও মার্কিন সরকারি বন্ডের মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। সোনার দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩৯৩ ডলার হয়েছে। ১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে ইউরো, ইয়েন ও পাউন্ডের তুলনায় ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।
ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের বাইরেও এ সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে নজর রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। আজকের মধ্যেই জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির ঘোষণা করতে পারে। বাজারে ধারণা, ব্যাংক অব জাপান এখনই সুদের হার না বাড়িয়ে অপরিবর্তিত রাখবে। তবে ব্যাংক অব জাপান ভবিষ্যতে বন্ড কেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে কি না, বিনিয়োগকারীরা সেদিকে তাকিয়ে আছেন। এ ছাড়া জাপানের নিক্কেই সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যদিও জাপানি মুদ্রা সামান্য দুর্বল হয়ে ডলারপ্রতি ১৪৪ দশমিক ৯৬ ইয়েন হয়েছে।
বাজারে গুঞ্জন আছে, বাজারে বড় অস্থিরতা তৈরি না হতে দিতে ব্যাংক অব জাপান হয়তো আগামী বছর থেকে দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কেনা হ্রাস করবে।
এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ভবিষ্যৎ যে দিকনির্দেশনা দেবেন, সবার নজর এখন সেদিকে। বিনিয়োগকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ফেড বছরের শেষ নাগাদ দুবার সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা আছে, এমন পূর্বাভাস নিয়ে এগোচ্ছেন।
সিকামোর আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের কাজ সবচেয়ে কঠিন। একদিকে শুল্কনীতি, অন্যদিকে বাণিজ্য চুক্তির সময়সীমা—তার ওপর আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনিশ্চয়তা। তাঁর মত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর চেয়ে জটিল হতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ন য দশম ক ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না। তবে সংঘাত বেশি দিন হলে তখন একটা প্রভাব পড়বে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে আমাদের দেশের জ্বালানি তেলের দামে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ইরান- ইসরায়েল সংঘাত আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেখেছি, এরইমধ্যে কিছুটা বেড়েছে। তবে যেগুলোতে আমরা অর্ডার করেছি সেগুলোতে প্রভাব ফেলে নাই৷”
তিনি বলেন, “গ্যাস, এলএনজির দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে আমরা বিবেচনায় নেবো। আজকে যে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছি সেটা পুরানো দামেই কোড করেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা আগের দামেই পাবো।”
আপাতত বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না না আপাতত বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “বিশেষ প্রস্তুতি বলতে আজকে আমরা যে এলএনজি, সার আনার প্রস্তাব অনুমোদন দিলাম সেটা পুরানো দামে। ভবিষ্যতে যখন নতুন কোনো কিছু আনবো তখন হয়তো কিছুটা ইফেক্ট পড়বে।”
সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প কিছু চিন্তা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বিকল্প চিন্তা বলতে অবশ্যই জ্বালানি মন্ত্রণালয় করছে। যেহেতু আমরা এলএনজির ওপর নির্ভর করি বেশি। জ্বালানি শুধু না, সার, জাহাজ চলাচলেও প্রভাব পড়বে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে জাহাজ আসে সেখানে প্রভাব পড়তে পারে। আমার মনে হয় সংঘাত বেশি দিন চলবে না।”
ঢাকা/হাসনাত/ইভা